পেটের মেদ কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়

পেটের বাড়তি মেদ নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা বর্তমানে অনেক বেশি। তাই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে জেনে নিন তল পেটের চর্বি কমানোর উপায় অথবা পেটের মেদ কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায় গুলো।

আধুনিক এই যুগে আমাদের কর্মক্ষেত্রের অধিকাংশ কাজই নির্দিষ্ট স্থানে বসে করতে হয়। ফলে শরীরের অন্যান্য স্থানের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পেটের মেন বেড়ে যায় অনেক। পেটের বাড়িতে চর্বি আমাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধির পাশাপাশি সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং চলাফেরায় সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই পেটের চর্বি কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায় গুলো জেনে আপনার পেটের বাড়িতে চর্বি ঝড়াতে পারবেন।

পেটের মেদ কমানোর জন্য আমাদের খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম, জীবনধারা পরিবর্তন সহ আরোও কিছু টিপস মেনে পেটের মেদ কমাতে পারবেন। নিচে পেটের মেদ কমানোর জন্য যে সকল বিষয় মেনে চলতে হবে তা তুলে ধরা হলোঃ

ক্যালোরি গ্রহনের পরিমান কমানো

পেটের মেদ কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে খাদ্যতালিকা নিয়ন্ত্রণ। আপনার খাবারে কতটা ক্যালরি রয়েছে তা যাচাই করে কম ক্যালরি গ্রহন করুন। এর জন্য বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ সীমিত করতে হবে। এবং ফল, শাকসবজি এবং দানাজাতীয় শস্যের খাবার গ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে।

খাদ্যে প্রোটিনের পরিমান বৃদ্ধি

খাদ্যের প্রোটিন গ্রহনে মানুষের বিপাক ক্রিয়া ভালো হয় এবং ক্ষুদা কম লাগে। তাই আপনার খাবারে চর্বিহীন প্রোটিনের উৎসমূলক খাবার গুলো অন্তর্ভুক্ত করুন। এটি পরোক্ষভাবে পেটের মেদ কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়। খাবারে মাছ, মুরগী, মটরশুটি, মসুর ডাল ইত্যাদি রোগ করুন। দেহের ওজন ঠিক রাখার জন্য বিশেষ করে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বেশি গ্রহন করুন। এবং প্রানীজ প্রোটিন, যেমন- গরু, মহিষের প্রোটিন উপাদান কম গ্রহন করুন।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ওজন কমাতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। এটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত উপায়ে আপনার দেহের ওজন হ্রাস করবে। কার্ডিওভ্যাসকুলার ব্যায়াম যেমন দৌড়ানো, সাইকেল চালানো এবং সাঁতার কাটা ইত্যাদি দেহের ক্যালোরি বার্ন করতে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য উপকারী। একজন প্রাপ্ত-বয়স্ক ব্যক্তির সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা উচিত।

স্ট্রেস/ দুশ্চিন্তা/ মানসিক চাপ আপনার শরীরে কর্টিসল তৈরি করতে পারে। কর্টিসল এমন একটি হরমোন যা পেটের চর্বির সঞ্চয় বৃদ্ধি করে। তাছাড়া মানসিক চাপ মস্তিষ্ককে অলস করে তোলে। যা পরোক্ষভাবে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে। মানসিক চাপের মাত্রা কমাতে ধ্যান, যোগব্যায়াম ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। পাশাপাশি নিজেকে সময় দিন এবং আপনার পরিবারের সাথে সময় কাটান। এটিও পেটের মেদ কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়।

কোমল পানীয় কম খাওয়া

অতিরিক্ত চিনিযুক্ত কোমল পানীয়, যেমন সোডা এবং জুসে উচ্চমাত্রায় ক্যালরি থাকে। গবেষনায় দেখা গেছে একটি ৫০০ মিলিলিটার কোমল পানীয়র মধ্যে প্রায় ৮০ গ্রামেরও বেশি চিনি থাকে। এতো চিনি আপনার ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। তাই এ ধরনের পানীয় গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন। এর বিপরীতে সাদা পানি পরিমান মতো বেশি খেতে পারেন।

ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি খান

ফাইবার জাতীয় খাবার আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ডাইজেশন সিস্টেমকে কার্যকর রাখতে অনেক উপকারি। পেটের নানান সমস্যা দূর করতে পরিমানমতো ফাইবার জাতীয় খাবার খান। এটি আমাদের দেহে দীর্ঘক্ষণ শক্তির যোগান দেয় এবং ক্যালরি গ্রহন কমাতে সাহায্য করে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে ফল, ডাল, লেবু, শাকসবজি ইত্যাদি খেতে পারেন। আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার অন্তর্ভুক্ত করুন।

উপরোক্ত পেটের চর্বি কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়গুলো আপনার জীবনে প্রয়োগ করুন। কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্যের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।

আপনার তল পেটের চর্বি কমানোর উপায় অথবা পেটের মেদ খুব বেশি বেড়ে গেলে, তা কমানোর জন্য বেশ কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় রয়েছে। এসকল উপায় গুলোর মধ্য থেকে সেরা ৬ টি ঘরোয়া উপাদানের ব্যবহার নিচে তুলে ধরা হলোঃ

(১) গ্রিন টি পান করা

গ্রিন টি ওজন কমানোর জন্য অনেক বেশি পরিচিত একটি উপাদান। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এবং এতে ক্যাটিচিন নামক এক ধরনের যৌগ রয়েছে। যা আপনার বিপাক ক্রিয়ায় এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি পান করলে আপনার পেটের চর্বি সহ দেহের সামগ্রিক ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুন: মুখের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করার উপায়

ওজন কমানো ছাড়াও গ্রিন টি এর বেশ কিছু স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকারিতা রয়েছে। তাই দৈনন্দিন জীবনযাপনে এটি সংযুক্ত করতে পারেন।

(২) আদা

আদা হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং পেটের অভ্যন্তরীণ প্রদাহজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত আদা খাওয়া আপনার ওজন কমাতেও প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করতে পারে। তাই অতিরিক্ত চর্বি কমাতে আদা চা পান করতে পারেন। অথবা আপনার খাবারের সাথে তাজা আদা যোগ করতে পারেন। এটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পেটের মেদ কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়।

(৩) দারুচিনি

দারুচিনি এমন একটি মশলা যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি মানবদেহের ওজন কমাতেও অনেকটাই কার্যকর উপাদান। স্বাভাবিকভাবেই আমরা রান্নায় দারুচিনি ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া আপনার অন্যান্য খাবারে দারুচিনি যোগ করতে পারেন। এমনকি দারুচিনি যুক্ত চা পান করতে পারেন, যা পেটের বাড়তি চর্বি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহার করলে অল্প দিনের মধ্যেই ভালো ফল পেতে পারেন।

(৪) জিরার পানি পান

জিরা ভেজানো পানি পেটের বহু সমস্যা দূর করতে একটি কার্যকরী ও বহুগুন সম্পন্ন উপাদান। এটি অ্যাসিডিটির সমস্যা, পেট ব্যাথা, বদহজন জনিত সমস্যা দূর করে। পাশাপাশি পেটের চর্বি কমানোর অন্যতম একটি কার্যকর উপায়ও এটি। নিয়মিত সকালে জিরা পানি পান করলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে, প্যাটের গ্যাস কমবে ও পেটের মেদ কমতে থাকবে।

(৫) লেবুর পানি

সকালে খালি পেটে হালকা গরম লেবুর পানি পান করলে আপনার বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি হয়। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড পেটের চর্বির অণুগুলোকে ভেঙে ফেলে। ফলে এটি পরোক্ষভাবে আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করে।(৬) আপেল সাইডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা বারবার ক্ষুধা লাগার প্রবনতা দূর করে। এটি দেহের ক্যালোরির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। ফলে পেটের চর্বি ও শরীরের অন্যান্য স্থানের ওজন বাড়তি ফ্যাট হ্রাস পায়। তাছাড়া আপেল সাইডার ভিনেগার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং তৃষ্ণা কমাতেও সাহায্য করে।

উপরোক্ত পেটের চর্বি কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায় গুলোর যেকোন একটি আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপনে যুক্ত করুন। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও খাদ্যতালিকা সঠিকভাবে মেনে চলুন। তাহলে অল্প দিনের মধ্যেই কাঙ্খিত ফলাফল পাবেন।

পেটের মেদ কমানোর জন্য আপনার খাবার তালিকায় যেসকল খাদ্যগুলো যুক্ত করতে পারেন, সেগুলো হলো: মটরশুটি, সবুজ শাক-সবজি, পানি, শশা, আভাকাডো, পিপারমেন্ট, তরমুজ, কাজুবাদাম, যব বা জই, আপেল ইত্যাদি। এ ছাড়া ব্লু বেরি, গ্রিন টি, সয় খাওয়া পেটের মেদ ঝড়াতে সাহায্য করে।

পেটের মেদ কমানো

শুধুমাত্র উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারই পেটের মেদ বাড়ায়, বিষয়টি এমন নয়। বরং বেশি ক্যালরিযুক্ত যেকোনো খাবারই পেটের মেদ বাড়ার কারণ হতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান, যেমন- মদ, মিষ্টিজাতীয় খাবার, বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার পেটের মেদ অনেকাংশে বৃদ্ধি করে।

ওয়েক ফোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ট্রান্সফ্যাট পেটের মেদ বাড়িয়ে তোলে। এ ধরনের ফ্যাট পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের হাই ফ্যাট যুক্ত খাবার, যেমন- আলুর চিপস, প্যাসট্রিস, ভাজা খাবারে। তাছাড়া কোমল পানীয়, মিষ্টিজাতীয় ব্যাভারেজ ইত্যাদির মধ্যে অ্যাডেড সুগার থাকে। এগুলোও পেটের মেদ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

অন্যদিকে, লাল মাংস, স্যাচুরেটেড চর্বিজাতীয় খাবার কমিয়ে ফল ও সবজি খান। পেটের চর্বি কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায় হিসেবে, এই খাদ্য তালিকার পাশাপাশি অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

পেটের মেদ বা চর্বি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। অতিরিক্ত পেটের চর্বি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং এমনকি কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিরও সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া চলাফেরায় অসুবিধা, জীবনের স্বাদ নিতে না পারা ইত্যাদি সাধারন সমস্যা তো আছেই।

অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য কে নষ্ট করে। একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন পেতে নিজের ওজন ঠিক রাখা ও পেটের নিয়ন্ত্রনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে উপরোক্ত উপায়গুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করে খুব কম সময়ের মধ্যেই পেটের বাড়তি মেয়াদ কমাতে পারবেন।

পেটের বাড়তি চর্বি/ মেদ আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে নানানভাবে বিষাদগ্রস্ত করতে পারে। তাই উপরোক্ত পেটের মেদ কমানোর সহজ ও কার্যকর উপায়গুলো আপনার জীবনে প্রয়োগ করুন। এবং একটি সুস্থ জীবনব্যবস্থায় পরিচালিত হন।

Share This Post
Scroll to Top