মাথার চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

বর্তমানে অত্যাধিক চুল পড়ার সমস্যায় ভাবছেন অধিকাংশ মানুষ। মানুষের মাথায় গড়ে প্রায় ১০ হাজার চুল থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিদিন ১০০/ ১২৫টি চুল পড়া স্বাভাবিক। তবে এর বেশি চুল পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তার জন্য প্রাকৃতিকভাবে মাথার চুল পড়া বন্ধ করার উপায় অবলম্বন করতে পারেন।

অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ, চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়, চুলের গোড়া মজবুত করতে, মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন এখানে।

চুল পড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও অত্যাধিক চুল পড়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। চুল পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে:-

  • বংশগত/ জিনগত সমস্যা।
  • বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের পরিবর্তন।
  • মাথার ত্বক অপরিষ্কার থাকা।
  • চুলের যত্ন না নেওয়া।
  • দীর্ঘদিন কঠিন অসুখে জর্জরিত থাকা।
  • শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি।
  • বিভিন্ন ঔষধ সেবনের ফলে বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়।
  • সঠিক জীবন ব্যবস্থা না মেনে, স্বাস্থ্য রক্ষায় উদাসীনতা ইত্যাদি।

এছাড়াও মাথার চুলে জেল, হেয়ার স্প্রে, ক্রিম, হেয়ার ড্রায়ার মেশিনের ব্যবহারের ফলেও চুলের স্থিতি শক্তি কমে যায়। ফলে অতিরিক্ত চুল পড়ে।

বর্তমানে চুল পড়া বন্ধের জন্য এবং চুল ঘন করতে নানারকম প্রসাধনী সামগ্রী বাজারে পাওয়া যায়। এগুলোর উপকারী প্রভাবের পাশাপাশি অনেক বেশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তাই চুল পড়া বন্ধ করার উপায় হিসেবে প্রাকৃতিক সামগ্রীগুলো ব্যবহার করা উচিত। নিচে চুল পড়া বন্ধের জন্য সেরা কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার তুলে ধরা হলো:

মাথার চুল পড়া বন্ধ

আমাদের দেহে যেমন খাবার থেকে গৃহিত পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি চুলের জন্য অন্যতম সেরা পুষ্টি উপাদান হলো নারিকেল তেল। নিয়মিত নারিকেল তেলের ব্যবহার চুলের সকল প্রকার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

এক্ষেত্রে বাজারের যেকোনো অনুমোদিত কোম্পানির তেল ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন মাথায় নারিকেল ব্যবহার এবং কমপক্ষে ১ দিন চুলে শ্যাম্পু করতে হবে। চুল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এবং এভাবে চুলের যত্ন নিলে চুল পড়া বন্ধ হবে।

আয়ুর্বেদের বিভিন্ন ওষুধের একটি অন্যতম উপাদান নিমপাতা। প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে নিমপাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম পাতায় থাকা গুনাগুন চুলের ঘোড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত করে। এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে বিশেষভাবে কার্যকর।

এই উপাদানটি ব্যবহারের জন্য- প্রথমেই কিছু নিমের পাতা নিয়ে বেটে তার থেকে নির্যাস সংগ্রহ করুন। সেই নির্যাসের সাথে নারিকেল তেল বা অন্য যেকোন চুলে ব্যবহারের তেল মিশিয়ে নিয়ে মাথার ত্বকে ও চুলে ব্যবহার করুন। চুলের গোড়া মজবুত করতে, চুল ঘন করতে এবং চুল পড়া বন্ধ করার উপায় হিসেবে এর কার্যকারিতা অনেক বেশি।

অলিভ অয়েল খুবই পুষ্টিকর প্রাকৃতিক উপাদান। এটি একইসাথে খাদ্য হিসেবে এবং প্রসাধনী সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অলিভ অয়েলের সাথে লেবুর রসের মিশ্রণ চুলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি ঘরোয়া টোটকা।

এই উপাদানটি ব্যবহারের জন্য- অলিভ অয়েল ও লেবুর রস ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর তা হালকা গরম করে নিন এবং মাথায় মেসেজ করুন। ১ ঘন্টা মাথায় রেখে ধুয়ে ফেলুন।

অলিভ অয়েল ও লেবুর রসের মিশ্রণে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী চুল পড়া রোধ করে ও চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।

মেথি আমাদের চুল পড়া কমাতে, খুশকি দূর করতে, চুলের গোড়া মজবুত করতে, চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ও চুল কালো রাখতে অনেক উপকারী। মেথিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও মেলানিন থাকে। যার প্রতিটি উপাদান চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের চুল পড়া কমাতে, খুশকি দূর করতে, চুলের গোড়া মজবুত করতে, চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ও চুল কালো রাখতে মেথি অনেক উপকারী। মেথিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও মেলানিন থাকে। যার প্রতিটি উপাদান চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই উপাদানটি ব্যবহারের জন্য- কিছু পরিমান মেথি নিন। সাথে ১৫-২০ টি মেহেদী পাতা ও পরিমান মতো সরিষার তেল মিশিয়ে নিন। এবার, মিশ্রনটি গরম করে তেল টা ছেকে নিয়ে সংরক্ষণ করুন। তারপর মাথায় মেখে ২০-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন।

মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের মহৌষধ বলা হয় কালোজিরাকে। এটি চুল পড়া বন্ধ করার উপায় হিসেবেও অত্যন্ত উপকারী।

এই উপাদানটি ব্যবহারের জন্য- নারিকেল তেল বা অন্য কোন তেলের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে ভালোভাবে গরম করতে হবে। তারপর সেই মিশ্রন থেকে তেল টা ছেকে নিন। নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করলে মাথার চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়। এভাবে তৈরি কালোজিরার তেল শরীরে ব্যবহার করলেও ব্যাথা ও চর্মরোগ থেকে উপশম পাবেন।

মাথার চুল ও দাড়ির উন্নতিতে পেঁয়াজের রস অনেক বেশি কার্যকর। মাথার চুল পড়া বন্ধ করতে, চুলের ঘনত্ব বাড়াতে, চুলের গোড়া মজবুত করতে নিয়মিত পেঁয়াজের রস মাথায় লাগাতে পারেন।

এই উপাদানটি ব্যবহারের জন্য- পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে তার থেকে পেঁয়াজের নির্যাস ছেকে আলাদা করে নিন। গোসলের পূর্বে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি মাথায় চুলের গোড়ায় মাখুন। তারপর ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপাদান টি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়, গোড়া মজবুত হয় ও চুল ঘন হয়।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আমরা অ্যালোভেরা জেলকে বিশেষভাবে ব্যবহার করি। এটি চুলের পুষ্টি জোগাতেও অনেক বেশি কার্যকর। এতে থাকা উপাদান চুলকে স্বচ্ছ ও সিল্কি করে। এবং চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া বন্ধ করতে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে।

এই উপাদানটি ব্যবহারের জন্য- প্রথমে অ্যালোভেরা থেকে জেলটিকে আলাদা করে নিন। তারপর হালকা গরম করে মাথার ত্বকে মালিশ করুন। মাথায় ৩০ মিনিট মেখে রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে এটি অনেক বেশি কার্যকর।

এসকল চুল পড়া বন্ধ করার উপায়গুলোর মধ্যে যেকোনো ১টি নিয়মিত ব্যবহার করলেই কাঙ্খিত ফলাফল পেতে পারেন।

মাথার চুল পড়া বন্ধ

চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়া প্রতিরোধ করতে “পেঁয়াজের রসের চুল মাস্ক” একটি সেরা প্রাকৃতিক হোম রেমিডি। নিচে এর প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারবিধি তুলে ধরা হলো:

উপাদানসমূহ:

  • ১/২ টি মধ্যম আকারের পেঁয়াজ;
  • ব্রাশ;
  • ব্লেন্ডার/ গ্রেটার;
  • নারিকেলের তেল (ঐচ্ছিক);
  • যেকোন শ্যাম্পু;

প্রস্তুত প্রণালী:
পেঁয়াজ কেটে ব্লেন্ড করুন। তারপর একটি মসলিন কাপড় ব্যবহার করে মিশ্রণ থেকে রস আলাদা করুন। আপনার মাথার স্ক্যাল্প সেনসিটিভ হলে, কার্যকারিতা বাড়াতে নারিকেল তেল মিশিয়ে নিন। পেঁয়াজ রস এবং নারিকেল তেলের পরিমাণ সমানভাবে নিয়ে মিশ্রণ করতে হবে।

ব্যবহারবিধি:
মিশ্রণটি আপনার স্ক্যাল্পে/ মাথার ত্বকে লাগান। সম্পূর্ণ মাথায় মিশ্রণটি সঠিকভাবে লেগেছে কিনা নিশ্চিত করুন। তারপর ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা রেখে ধুয়ে নিন।

চুলের গোড়া মজবুত করতে, নতুন চুলের উন্নয়নে এবং চুল পড়া বন্ধ করার উপায় হিসেবে এটি অনেক বেশি কার্যকর।

শরীরের পাশাপাশি চুলের যত্নের ক্ষেত্রেও দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে। চুলের সঠিক যত্নের জন্য-

  • নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন, যেন চুল সুন্দর ও ঘন হতে পুষ্টি পায়।
  • মাথার স্কাল্প পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • চুলে নিয়মিত তেল ব্যবহার করা।
  • অতিরিক্ত শ্যাম্পু করবেন না। সপ্তাহে ১/২ বার চুলে শ্যাম্পু করুন।
  • চুল আচড়ানোর সময় এবং ভেজা চুল শুকানোর ক্ষেত্রে চুলকে খুব বেশি কোকড়ানো যাবে না। ভেজা চুল আচাড়ানো যাবে না।

এছাড়া কিছু ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস (জাঙ্ক ফুড, এলকোহল ইত্যাদি) থেকে দূরে থাকতে হবে। চুলে জেল, হেয়ার স্প্রে, ক্রিম, হেয়ার ড্রায়ার মেশিনের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে।

ছেলে মেয়ে সকলেরই প্রাকৃতিকভাবে চুল পড়ে থাকে। এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু মাঝে মাঝে মেয়েদের মাথার চুল খুব বেশি মাত্রায় ঝরে পড়ে। ফলে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন অনেকেই।

মেয়েদের অনেক বেশি চুল পড়লে, উপরোক্ত প্রাকৃতিক উপায়গুলো ব্যবহার করে এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এতে বন্ধ হবে মাথার চুল পড়া এছাড়াও-

  • মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন।
  • নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার করুন।
  • পিয়াজের রস, কালোজিরার তেল, অলিভ অয়েল, নিমপাতার তেল, মধু, মেথি ইত্যাদি চুলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন।

চুল পড়া বহুল প্রচলিত একটা সমস্যা। উপরোক্ত চুল পড়া বন্ধ করার উপায় ব্যবহার করে আপনার সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। তবে সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করলে মাথার চুল পড়া বন্ধ দ্রুত হবে। যেকোন উপাদানেরই অতিরিক্ত ব্যবহার বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

Share This Post
Scroll to Top