জমি কেনার আগে কি কি দেখতে হয়

বাংলাদেশে জমি কেনা-বেচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। প্রায়শই দেখা যায়, সাধারণ মানুষ এই জটিল প্রক্রিয়ায় প্রতারিত হয়। জমি কেনার সময় যদি প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা জমি কেনার আগে কি কি দেখতে হয় বা কেনার আগে সময় প্রতারণা এড়াতে যেসব বিষয় যাচাই করা জরুরি, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। অবশ্যই জমি কেনার আগে পাঁচটি বিষয় বিষয় জানার প্রয়োজন।

জমির দলিল হলো জমির মালিকানার বৈধতা নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি। জমির দলিল নকল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক, অতএব এটা একেবারেই অসম্ভব নয় যে আপনি যে জমি কিনতে চাচ্ছেন সেটার দলিল নকল। কেননা অনেকে সরকারি খাস জমি অথবা অন্যের জমি নিজের নামে নকল দলিল করে বিক্রি করে ফেলে। জমি কেনার আগে দলিল সঠিকভাবে যাচাই করা আবশ্যক। সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জমির গত ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিকতা পরীক্ষা করা উচিত। শুধু বর্তমান মালিকের মালিকানা যাচাই করলেই হবে না; বরং পূর্ববর্তী মালিকদের মালিকানার ধারাবাহিকতাও খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়া দলিল সঠিক কিনা তা যাচাই করার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

জমির রেকর্ড বা খতিয়ান সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। মিউটেশন বা নামজারি সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। মিউটেশন বা খতিয়ানের সময় ভুল রেকর্ড বা জালিয়াতির সম্ভাবনা থাকে, তাই জমির রেকর্ডে যিনি মালিক হিসেবে রয়েছেন, তিনি আসল মালিক কিনা তা নিশ্চিত করতে তফসিল অফিস বা এসিল্যান্ড অফিস থেকে যাচাই করা উচিত। সাব-রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে জমির অতীতের মালিকানা সম্পর্কিত তথ্যও জানা সম্ভব, তবে এর জন্য কিছু সময় লাগতে পারে।

জমি কেনার আগে কি কি দেখতে হয়

জমি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র থাকা জরুরি। জমির অবস্থান ও প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের অনুমতিপত্রের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, যদি জমি রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) এর আওতাভুক্ত হয়, তাহলে বিক্রির জন্য রাজউক থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। এছাড়া গণপূর্ত বিভাগের অধীনে থাকা জমি বিক্রি করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিতে হবে। জমির মালিকানার প্রকারভেদ অনুযায়ী অনুমতিপত্রের চাহিদা ভিন্ন হতে পারে।

জমির মালিক তার জমির খাজনা নিয়মিত পরিশোধ করেছেন কিনা তা যাচাই করা উচিত। জমির খাজনার হালনাগাদ কপি জমির মালিকের কাছেই থাকে, যা জমি কেনার সময় যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাজনা না পরিশোধিত জমি কেনার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে।

বাংলাদেশে জমির দখল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দলিল অনুযায়ী জমির পরিমাণের সাথে বাস্তবের জমির পরিমাণ মেলে না। তাই জমি কেনার আগে সরেজমিনে গিয়ে জমির পরিমাপ ও দখল নিশ্চিত করা উচিত। জমির সঠিক পরিমাণ নিশ্চিত করতে জমি কেনার আগে সার্ভে করানোও বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষ করে গ্রামের জমির ক্ষেত্রে জমির দখল নিয়ে সমস্যার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

জমির বর্তমান মালিক যদি জমিটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন, তাহলে জমির বাটোয়ারার সঠিকতা যাচাই করা আবশ্যক। জমির মালিকের যদি আরো ভাইবোন থাকে, তাহলে বাটোয়ারা দলিলে সঠিকভাবে জমির ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে জমি নিয়ে মামলা বা বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে।

জমি কেনার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে জমিটি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে কিনা। জমি বন্ধক রাখা থাকলে, ভবিষ্যতে তা নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে জমির মর্টগেজ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়, যা জমি কেনার সময় যাচাই করা উচিত।

উপসংহার

আর্টিকেলে আপনি জানতে পারলেন জমি কেনার আগে কি কি দেখতে হয় অর্থাৎ জমি কেনার আগে যে পাঁচটি বিষয় জানার প্রয়োজন। অধিক সতর্কতার জন্য অতিরিক্ত আরও দুটি বিষয় আমরা আমাদের আর্টিকেলে উল্লেখ্য করেছি।

জমি কেনার সময় প্রতারণা এড়াতে উপরোক্ত বিষয়গুলো যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমির বৈধতা নিশ্চিত করা এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অনুমতিপত্র যাচাই করে নিতে হবে। জমি কেনার আগে যথাযথভাবে সবকিছু যাচাই করা হলে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এবং প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে জমি কেনা সর্বদাই নিরাপদ এবং সঠিক পদক্ষেপ।

Scroll to Top