চন্দ্রযান-৩ এর চন্দ্র জয়ের কথা

চন্দ্রযান-৩: ১৯৬৯ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারতের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভারত ‘Indian Space Research Organisation’ সংক্ষেপে ISRO-এর যাত্রা শুরু হয়। বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পার হয়ে তারা আজ সফল।

মানব জীবনের শুরু থেকে মানুষের চাঁদের প্রতি ছিল অসম্ভব কৌতুহল। এই জন্য চাঁদ নিয়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য লোককথা। এই চাঁদ ছুঁয়ে দেখার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। ১৯৫০ সাল থেকে চাঁদে মিশন পরিচালনা করা হচ্ছে। এই মিশন গুলো ছিল বিভিন্ন ধরনের।

চন্দ্রযান-৩

Flyby mission হচ্ছে চাঁদের পাশ দিয়ে চলে যাবে চাঁদ পরীক্ষা করার যন্ত্রটি। এটা চাঁদের কক্ষপথে বারবার ভ্রমণ করতে থাকবে না। এমনই এক মিশন পরিচালনা করেছে সর্বপ্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৯ সালের জানুয়ারিতে Luna-1 নামক যন্ত্রটি। এর দুই মাস পরে মার্চ মাসে আমেরিকার নাসা প্রেরণ করে Pioneer-4 নামক যন্ত্র।

চাঁদের কক্ষপথে উপগ্রহের মতো পরিভ্রমণ করবে এমন ধরনের মিশনকে বলা হয় লুনার অরবিট। এবারও সর্বপ্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন Luna-10 নামক যন্ত্রটির চাঁদের কক্ষপথে সফলভাবে প্রেরণ করতে সক্ষম হয়।

চন্দ্রযান-৩

আরেকটি মিশনের নাম হচ্ছে ইমপেক্ট মিশন। এটাতে চাঁদে পরীক্ষা করার যন্ত্রটি চাঁদের ভূমিতে বিধ্বংস হয়। বিধ্বংস হওয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওই যন্ত্রটি তথ্য প্রদান করতে থাকে। এমন ধরনেরই একটি অভিযান পরিচালনা করেছে ইসরোর প্রথম চন্দ্রযান। ২২ শে অক্টোবর ২০০৮ চন্দ্রযান-১ চাঁদের ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে। সেটার মাঝে ছিল Chandrs Altiudinal Composition Explorer যন্ত্র। যা প্রতি চার সেকেন্ড পর পর রিডিং নিতো। এটা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পরীক্ষা চালায়। ভারতই সর্বপ্রথম প্রমাণ করে যে চন্দ্রপৃষ্ঠে পানি রয়েছে। কিন্তু নাসা এই কৃতিত্ব নিজেদের বলে চালিয়ে দিয়েছে। চাঁদের ভূপৃষ্ঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যন্ত্র নামানোকে বলে lander mission

১৯৬৬ সালের সর্বপ্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন এই ধরনের মিশন পরিচালনা করে। ভূপৃষ্ঠে যে যন্ত্রটি নামানো হয় সেটি একই স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে পারে না। এজন্য সেটার মধ্যে চলাচলযোগ্য একটি যন্ত্র স্থাপন করতে হয়। যাকে বলা হয় Rover. সোভিয়েত ইউনিয়ন চাঁদের বুকে ১৯৭০ সালে প্রথম রোভার প্রেরণ করে। যদিও এর এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালে নাসা চাঁদে মানুষ প্রেরণ করে। এই পর্যন্ত মোট ১২ জন চাঁদ চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে।

চাঁদের বুকে রোভার যন্ত্রটি প্রেরণের লক্ষ্যে ২০১৯ সালে ইসরো চন্দ্রযান-২ যন্ত্রটি পাঠায়। কিন্তু সেটা সফল হয়নি। সফটওয়্যার জটিলতার জন্য ৬ সেপ্টেম্বর সেটা বিধ্বংস হয়। যদিও এখনো ওই মিশনের স্যাটেলাইটটি চন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে চলছে। ওই মিশন অসফল হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, সেটার ল্যান্ডিং এরিয়া ছিল কম। জ্বালানিও কম ছিল। এবারের চন্দ্রযান-৩ যন্ত্রটিকে আরো আধুনিক ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এটাতে আরো অধিক সোলার সেল ও জ্বালানি দেওয়া হয়েছে। এর ল্যান্ডিং এরিয়াও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:: জিন্স নীল হওয়ার কারণ কি?

চন্দ্রযান-৩ এর দুইটি অংশ। একটি নাম বিক্রম এবং বিক্রমের মধ্যে থাকবে প্রজ্ঞান। প্রধান হচ্ছে একটি রোভার অর্থাৎ চলমান যন্ত্র। বিক্রমের ওজন ১৭৫০ কেজি। প্রজ্ঞানের ওজন মাত্র ২৬ কেজি। যোগাযোগের জন্য চন্দ্রযান-২ এর স্যাটেলাইটিই ব্যবহার করা হবে।

  • প্রজ্ঞান যন্ত্রটির মধ্যে আছে LIBS ও APXS
  • LIBS- laser induced breakdown spectrosc.
  • এই যন্ত্রটি চাঁদের মাটি পরীক্ষা করবে।
  • APXS- alpha particle x-ray spectrometer
  • এটা চাঁদে বিভিন্ন আলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।

বিক্রম যন্ত্রটির মাঝে আছে RamBHA, CHaSTE, ILSA ও নাসার তৈরি LRA. RamBHA- radio anatomy of moon bound hypersensitive ionosphere and atmosphere. এটা তার শক্তিশালী লেজার বিম প্রয়োগ করে পাথরকে গলিয়ে দেবে। এবং সেখান থেকে উৎপন্ন গ্যাস গুলো পরীক্ষা করবে।

  • CHaSTE- Chandra’s surface thermophysical experiment. এ যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হবে।
  • ILSA- instrument for lunar seismic activities. এই যন্ত্রটির সাহায্যে চাঁদের ভূকম্পন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
  • নাসার তৈরি LRA- laser retroreflcctor array এই যন্ত্রটির সাহায্যে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।

কেন চাঁদ নিয়ে এত উন্মাদনা?

খুব কম দেশই পেরেছে চাঁদের ভূপৃষ্ঠে নিজেদের যন্ত্র স্থাপন করতে। আমেরিকা, রাশিয়া, ইসরাইল ও চীন এদের মধ্যে সর্বাগ্রে। মানুষের এখন লক্ষ্য হচ্ছে মঙ্গলে বাসস্থান নির্মাণ করা। সেখানে পৌঁছতে হলে প্রচুর পরিমাণ জ্বালানি দরকার রকেটে। এর জন্য চাঁদ হতে পারে একটি ভালো ফুয়েল স্টেশন। চাঁদের মধ্যে থাকা পানিকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনে পরিণত করে রকেট ফুয়েল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া চাঁদের মধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর ছয় ভাগের এক ভাগ। এর ফলে চঁন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে অল্প জ্বালানি ব্যয় করে মহাকাশে যাত্রা করা সম্ভব। এমন ধরনের সব মহাপরিকল্পনা করে রেখেছে বড় বড় দেশগুলো। মহাকাশ জয়ের মহাযজ্ঞে ভারতের এই সাফল্য মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

Share This Post
Scroll to Top