জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ড অনলাইনে সংশোধন করার নিয়ম এবং অনলাইন আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড বা এন আই ডি কার্ড কিভাবে সংশোধন (nid songsodhon) করবেন এবং বিভিন্ন ধরণের সংশোধনের জন্য কি কি প্রমানপত্র দেয়া লাগবে এবং কিভাবে আপনার Computer বা Mobile দিয়ে অতি সহজে অনলাইনে সংশোধন করবেন তা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রায় সবারই এসআইডি কার্ডে নানা ধরণের ভুল রয়েছে। নামের ভুল, বাবার নাম কিংবা মায়ের নামে ভুল, জন্মতারিখে বা ঠিকানায় ভুল রয়েছে। এসব সমাধানের উপায় কি?
আরও পড়ুন: অনলাইনে ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
অনেকেই শুধুমাত্র জানার অভাবে, বুঝতেই পারছেন না যে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। আপনার ঘরে বসে, যথাযথ প্রমাণসহ অনলাইন আবেদন করে ১৫ অথবা ২০ দিনের মধ্যে ভুলগুলো সংশোধন করতে পারবেন। তাহলে জেনে নেন আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম।
অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে হলে প্রথমে ভিজিট করুন services.nidw.gov.bd ওয়েব সাইটে। এখানে NID নম্বর, জন্ম তারিখ ও ঠিকানা দিয়ে একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। Log in করে প্রোফাইলের যেসব তথ্য ভুল আছে তা এডিট করে, সংশোধন নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে প্রয়োজনীয় প্রমানাধি Upload করে সাবমিট করতে হবে।
আপনার আবেদন অনুমোদন হলেই NID কার্ড সংশোধন হবে এবং আপনার মুঠোফোনে SMS এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। এরপরই অনলাইন থেকে সংশোধিত NID কার্ড ডাউনলোড করে নিতে হবে।
NID – এর যেসব তথ্য সংশোধন করা যাবে
- নাম সংশোধন
- জন্ম তারিখ সংশোধন
- মায়ের নাম সংশোধন
- বাবার নাম সংশোধন
- ঠিকানা পরিবর্তন
- অন্যান্য তথ্য সংশোধন
NID কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে ?
NID কার্ড সংশোধন করতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এমপিও শীট বা সার্ভিস বইয়ের কপি । এসব তথ্যের মধ্যে যে কোন ২ টি দিয়ে ভোটার কার্ড সংশোধন করা যাবে।
যদি, আবেদনকারীর প্রধান ডকুমেন্ট ২টির মধ্যে কোনটিই না থাকে সেক্ষেত্রে বিয়ের কাবিননামা, অফিস প্রধানের প্রত্যায়ন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের ওয়ারিশ সনদ, ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয় পত্র এবং সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া যায়।
NID কার্ড সংশোধন ফি কত ?
সংশোধনের ধরণ ফি
এনআইডির তথ্য সংশোধন : NID Info Correction | ২৩০ টাকা |
অন্যান্য তথ্য সংশোধন : Other Info Correction | ১১৫ টাকা |
উভয় তথ্য সংশোধন :Both Info Correction | ৩৪৫ টাকা |
রিইস্যু : Duplicate Regular | ৩৪৫ টাকা |
রিইস্যু জরুরী: Duplicate Urgent | ৫৭৫ টাকা |
অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধনের নিয়ম
অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্রের ওয়েবসাইটে একাউন্ট রেজিষ্টার করতে হবে। তারপর একাউন্টের প্রোফাইল Option – এ গিয়ে তথ্য সংশোধনের পর, এবার এনআইডি ফি পরিশোধ শেষে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র Upload করে এনআইডি সংশোধন আবেদনটি জমা দিন।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের প্রক্রিয়াটি নিচে ধাপে ধাপে দেখানো হলো।
ধাপ ১: ডকুমেন্টসগুলোর স্ক্যান/ ছবি নেয়া
NID সংশোধনের আবেদন করার পূর্বে প্রমাণপত্রগুলো Scan করে নিতে হবে। কম্পিউটার স্ক্যান হলে ভালো। না থাকলে মোবাইলের সহায়তায় ভাল আলোতে, সোজাসুজি করে ছবি তুলে নিন। ছবিটি সুন্দরভাবে ক্রপ করে।
আবেদনকারীর সব ডকুমেন্ট স্ক্যান কপি কম্পিউটারের একটি নির্দিষ্ট ফোল্ডার বা মোবাইলে রাখুন।
ধাপ ২: NID ওয়েবসাইটে রেজিষ্ট্রেশন
এবার কম্পিউটার থেকে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র ওয়েবসাইটে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের একাউন্টে Registration করতে হবে।
রেজিস্ট্রেশনের পূর্বে আরেকটি মোবাইল থেকে Google Play Store হতে NID Wallet অ্যাপটি Install করে নিতে হবে। এটি আপনার Face Verification কাজে সহায়তা করবে।
ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার দিয়ে NID সেবার ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রে করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র একাউন্টের লিংকে গেলে একটি পেইজ আসবে।
আরও পড়ুন: ই নামজারি যাচাই বা খতিয়ান অনুসন্ধানের পদ্ধতি
সেখানে প্রথম অপশন রেজিস্টার করুন করুন।
এখানে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা স্মার্ট কার্ড নম্বর লিখুন। যদি নতুন ভোটার হলে ভোটার আবেদনের ফরম নম্বরটি লিখুন। ফরম নম্বর দিয়েও ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করা যাবে।
আবেদনকারীর জন্মতারিখ ও ছবিতে দেখানো Captcha Code টাইপ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। এবার আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা (বিভাগ, জেলা, উপজেলা) বাছাই করুন।
উপরের সব তথ্য সঠিক করে দিয়ে আপনার মোবাইল নম্বর দেখানো জায়গায় সচল মোবাইল নম্বর দিয়ে আপনার Account Verification করতে হবে। অবশ্যই আপনার মোবাইল নম্বরটি সচল এবং আপনার হাতে থাকতে হবে। কেননা এই নম্বরের একটি ভেরিফিকেশন OTP পাঠানো হবে।
এই অপশনে মোবাইল নম্বরটি সঠিকভাবে লিখুন এবং বার্তা পাঠান বাটনে ক্লিক করুন।
এবার যাওয়া ৬ ডিজিটের একটি ভেরিফিকেশন কোড নির্দিষ্ট জায়গার খালি ঘরে লিখুন এবং বহাল বাটনে ক্লিক করুন।
ফেইস ভেরিফিকেশন করুন
এবার আবেদনকারীর ফেইস Verification এর জন্য সেখানে QR কোড দেখানো হবে। NID Wallet অ্যাপ দিয়ে সেই কোড টি স্ক্যান করে আপনার হাতের মোবাইল দিয়ে ফেইস ভেরিফিকেশন করতে হবে।
এবার আপনার মোবাইলে ইনস্টল করা NID Wallet App টি অপেন করুন। ভাষা সিলেক্ট করে Agree and Continue দিয়ে ট্যাপ করুন। এরপর QR কোড স্ক্যান করুন।
QR কোড স্ক্যান করার পর আপনার ফেইস Verification অপশন আসবে। সেখানে কিভাবে প্রথমে আপনার সোজাসুজি ছবি তুলবেন, তারপর চোখ ক্যামেরার দিকে রেখে মাথা একটু বামে ও ডানে ঘুরাবেন তা দেখানো হবে।
আবেদনকারীর ফেইস স্ক্যান চালু করতে Start Face Scan বাটনে ক্লিক করুন।
এ্যাপ এ দেখানো ভিডিওর মত, আপনার মুখ মাথা একটু বামে ও ডানে ঘুরাবেন । ঠিক থাকলে ছবিতে OK বা টিক মার্ক দেখাবে।
এবার আবেদনকারীর Account Password সেট করতে হবে। কেননা ভবিষ্যতে ফেইস ভেরিফিকেশনের কোনরূপ ঝামেলা ছাড়াই একাউন্টে Log in করতে হলে, এজন্য সেট পাসওয়ার্ড বাটনে ক্লিক করে একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে।
Password না দিতে চাইলেও আপাতত কাজ সম্পন্ন করা যাবে। তবে পরামর্শ হলো পাসওয়ার্ড সেট করুন। পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কিংবা আবারও Download করতে সুবিধা হবে।
ধাপ ৩: তথ্য সংশোধন
সফলভাবে আবেদনকারীর Account Registration হলে, NID একাউন্টে Log in করবেন।
এবার প্রোফাইল অপশনে গিয়ে যে ৩ ধরণের তথ্য রয়েছে, ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য বা ঠিকানা। ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধনের জন্য উপরের ডান দিকের নীল রংয়ের এডিট বাটনে ক্লিক করে তথ্যগুলো পুনরায় Type করে এডিট Edit করার অপশন দেখতে পাবেন।
যে তথ্য সংশোধন করা প্রয়োজন তার বাম দিকের টিক অপশনে ক্লিক করে আপনার ভুল তথ্যগুলো প্রমাণপত্রেসহ সঠিকভাবে টাইপ করুন ।
এরপর, পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে আপনার সংশোধন করা তথ্যের সংশোধিত রুপ দেখতে পারবেন। সব ঠিকঠাক থাকলে আবারও পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ৪: এনআইডি কার্ড সংশোধন ফি প্রদান
এবার আপনার ভুল তথ্যের ধরণ অনুযায়ী ফি প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আবেদনকারী এতক্ষণ যা যা করেছেন তা Close না করে, এই পেইজেই থেকে ফি প্রদান শেষে আবেদনের বাকি কাজ শেষ করতে হবে।
ফি প্রদান করতে রকেট, বিকাশ, ওকে ওয়ালেট থেকে সহজেই NID ফি পরিশোধ করা যায়।
NID জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি জমা দেওয়ার নিয়ম
প্রথমবার আবেদনের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা ফি, এবং ১৫% ভ্যাট ৩০ টাকা, মোট ২৩০ টাকা ফি প্রদান করতে হয়।
অনরাইনে বিকাশ কিংবা রকেটের পে বিল অপশনে গিয়ে –
সরকারি ফি অপশনে ক্লিক করে NID Service অপশনটি বাছাই করুন। আপনার NID নম্বরটি ইংরেজিতে লিখুন
আবেদনের ধরণ বাছাই করুন। বিকাশে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি পরিশোধ, এরপর বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বর দিয়ে ফি পরিশোধ শেষে জাতীয় পরিচয়পত্রের ওয়েবসাইটে আবার ফিরে গিয়ে, প্রমাণপত্রসমূহ আপলোড করে আবেদনটি সাবমিট করুন।
ধাপ ৫: ডকুমেন্ট আপলোড ও আবেদন সাবমিট
১ম ধাপেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট কম্পিউটার গুলো স্ক্যান বা ছবি তুলে একটি ফোল্ডারে রাখতে বলেছিলাম। এখন আপনার ডকুমেন্ট গুলো আপলোড করে আবেদন সাবমিট করতে পারবেন।
ধাপ ৬: NID সংশোধন ফরম ডাউনলোড
আপনার আবেদন সাবমিট শেষে ড্যাশবোর্ডে ফিরে আসুন। উপরের দিকে আবেদনটি Download করতে একটি লিংক দেখতে পারবেন । লিংকে ক্লিক করে NID জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফরম ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন।
ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন
জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র হচ্ছে আবেদনকারীর এসএসসি এসএসসি সনদ (SSC Certificate) এবং ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের কপি। এসব প্রমাণপত্র না থাকে Passport, Driving License ইত্যাদি দেয়া যাবে।
অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য Educational Certificate, Birth Registration, Service Book, অথবা MPO Sheet কপি এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন একটি চিঠির মাধ্যমে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মতামত যাছাই করে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করা হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের অন্যান্য তথ্য সংশোধন
১. ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন
জাতীয় পরিচয়পত্রের অন্যান্য তথ্যের মধ্যে রয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, মোবাইল নম্বর, ধর্ম, ঠিকানা ইত্যাদি।
২. ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন
ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করা যায়না। আপনাকে একটি ঠিকানা পরিবর্তন ফরম পূরণ করে আপনার সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন জটিলতা কি
আপনার কাছে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র না থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে কিছু জটিলতা হতে পারে যদি । কারণ প্রমাণপত্র ছাড়া ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা সম্ভব নয়।
প্রমাণপত্র হিসেবে দেওয়া আপনার ডকুমেন্টগুলোতেও শুদ্ধভাবে আপনার তথ্য থাকতে হবে।
NID কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে
জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য সর্বোচ্চ সময় ৪৫ দিন সময় লাগে। তবে এটি নির্ভর করবে আবেদনের ধরণ বা ক্যাটাগরির উপর। উপযুক্ত প্রমাণপত্রসহ অনলাইনে আপলোড করে সঠিকভাবে আবেদন করার ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যায়।
কিছু ক্ষেত্রে জটিল সংশোধনের জন্য অতিরিক্ত ভেরিফিকেশনে আরো ৫-১০ দিন দেরি হতে পারে।
ভোটার আইডি কার্ড কতবার সংশোধন করা যাবে ?
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কোন লিমিট দেয়া হয়নি, আপনি যতবার ইচ্ছা সংশোধনের আবেদন করতে পারেন। তবে, তবে এক তথ্য শুধুমাত্র একবার সংশোধন করা হয়। ১মবার আবেদনে ফি ভ্যাটসহ ২৩০ টাকা, ২য়বার ৩৪৫, ৩য় বার থেকে যে কোন বার ৪৬০ টাকা ফি পরিশোধন করতে হবে।
সম্মানিত ভিজিটর আমি আব্দুল কাইয়ুম, পেশায় আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী। ব্লগ বলেন আর সংবাদ বলেন এটাই আমার নেশা ও পেশা। এই ব্লগের মাধ্যমে ভিজিটরদের সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করাই আমার ছোট্ট প্রয়াস মাত্র।