বিল গেটসের শৈশব কেমন ছিল: কেন বলা হয় ভবিষ্যতের পথিকৃৎ

বিল গেটস—বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি, মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রযুক্তি দুনিয়ার এক অগ্রগামী নেতা। তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি পুরো পৃথিবীকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রযুক্তির দিকে তাকাতে শিখিয়েছেন।

কিন্তু তাঁর সফলতার গল্প শুধু বড় কর্পোরেট বিজনেসের বা প্রযুক্তির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; তাঁর জীবনের প্রথম দিকের স্মৃতিগুলি অনেক গভীর, যা তাঁর সাফল্যের পথ তৈরি করেছে।

গেটসের শৈশব ছিল এক অদম্য কৌতূহল, অস্বাভাবিক প্রতিভা, এবং একটি শিক্ষিত পরিবেশে বেড়ে ওঠার ফলস্বরূপ। তিনি ছোটবেলা থেকেই যে সব অভিজ্ঞতা এবং শিখন অর্জন করেছিলেন, তা পরবর্তী সময়ে তাঁকে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।

বিল গেটসের শৈশবের স্মৃতিগুলি শুধু তাঁর প্রারম্ভিক দিনগুলির কাহিনি নয়, বরং আমাদেরকে প্রমাণ করে যে, প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের সমন্বয়ে, একজন শিশু একদিন পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। এই আর্টিকেলে, আমরা জানব তাঁর শৈশবের সেই স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, এবং ঘটনার কথা, যা তাঁকে এক নতুন পৃথিবীর পথ দেখিয়েছিল।

বিল গেটসের শৈশবের প্রাথমিক ভিত্তি ছিল তার পরিবার। তিনি এমন একটি শিক্ষিত ও সচেতন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তাঁর উন্নতি ও বিকাশের জন্য একটি উন্মুক্ত ও উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশ ছিল। তাঁর বাবা, উইলিয়াম এইচ. গেটস, ছিলেন একজন সফল আইনজীবী, এবং মা, মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপক ছিলেন। গেটসের পরিবারের মূল্যবোধ ছিল অত্যন্ত উচ্চমানের, এবং তাদের শৈশবকাল থেকেই শিক্ষা, সংস্কৃতি, এবং নৈতিকতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ছিল।

বিল গেটস তার জীবনের প্রথম দিকে পরিবার থেকে যা কিছু শিখেছিলেন, তা তাঁর ভবিষ্যত জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর বাবা-মা কখনোই তাকে চাপ দিতেন না, বরং তিনি নিজের পছন্দ অনুসারে যা ইচ্ছা তা করার স্বাধীনতা পেতেন। তবে, এই স্বাধীনতাও ছিল সীমিত এবং আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করার জন্য তাদের কাছ থেকে পাওয়া দিকনির্দেশনা ও সহায়তার কারণে। তারা গেটসকে এমনভাবে লালনপালন করেছিলেন যাতে সে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে শিখে এবং একইসাথে তার শিক্ষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আগ্রহ তৈরি হয়।

গেটসের মা, মেরি গেটস, ছিলেন একজন অত্যন্ত শিক্ষিত মহিলা এবং তিনি তাঁর ছেলেকে সবসময় উৎসাহিত করতেন। গেটস নিজে বলেছেন, “আমার মা আমাকে সবসময় বই পড়ার জন্য বলতেন। তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন যে, কোনও একটি বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

আরও পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা দেশ কোনটি?

যেমন ছিলেন বিল গেটসের বাবা Bill Gates :

তাঁর বাবা, উইলিয়াম গেটস, ছিলেন কঠোর কিন্তু সহানুভূতিশীল। তিনি গেটসের পড়াশোনায় সহায়তা করতেন, তবে তিনি চাইতেন তার ছেলে নিজে সিদ্ধান্ত নিক এবং ভবিষ্যত গড়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুক। পরিবারে শিক্ষার গুরুত্ব এবং মনোযোগ গেটসকে প্রতিটি অধ্যায়ে ভালো করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল।

শৈশবকালে, গেটসের পরিবারের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহ। বিল গেটস তার পরিবারের এই সমর্থন এবং পরিচর্যা দেখে শিখেছিলেন যে, কোনো কিছু অর্জনের জন্য একমাত্র দক্ষতা নয়, এর জন্য পরিবারের সহায়তা, ভালো দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রেরণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ধরণের পরিবেশে বেড়ে ওঠা গেটসকে তার শৈশব থেকেই শিক্ষা দিয়েছিল, যে জীবনে প্রাথমিক শিখন এবং একটি সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার তাকে শুধু একাডেমিক শিক্ষা দিয়েছে না, বরং তাকে একজন দায়িত্বশীল, যুক্তিসঙ্গত, এবং সদয় মানুষ হতে শিখিয়েছে, যা পরবর্তীতে তাঁর বিশ্বখ্যাত সাফল্যের ভিত্তি গড়ে তোলে।

বিল গেটসের জীবনে প্রযুক্তি ও কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহের শুরু হয়েছিল তাঁর শৈশবকালে, যখন তিনি লেকসাইড প্রিপারেটরি স্কুলে পড়াশোনা করতেন। এটি ছিল ১৯৬৮ সালের কাছাকাছি সময়, যখন কম্পিউটার ছিল একটি অত্যন্ত দুর্লভ এবং দামি জিনিস। তবে, গেটসের স্কুলে একদিন একটি টেলিপ্রিন্টার মেশিন আসে, যা তাকে প্রথমবারের মতো কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের দুনিয়ায় প্রবেশ করতে সাহায্য করে।

গেটসের বিস্ময়কর মুহূর্ত Bill Gates:

লেকসাইড স্কুলে প্রথমবারের মতো কম্পিউটার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা গেটসের জন্য ছিল এক বিস্ময়কর মুহূর্ত। সেই সময়, গেটস মাত্র ১৩ বছর বয়সে ছিলেন, এবং তাঁর মধ্যে এক অদম্য কৌতূহল কাজ করছিল—কীভাবে এই যন্ত্রগুলো কাজ করে এবং কীভাবে এগুলোর মাধ্যমে নতুন কিছু তৈরি করা যায়। তিনি নিজের আগ্রহ ও জ্ঞানের গভীরে প্রবেশ করতে শুরু করেন, আর সেই থেকেই তার কম্পিউটার এবং প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি আসক্তি জন্ম নেয়।

গেটস নিজের স্মৃতিতে উল্লেখ করেছেন, “আমরা প্রথমবার যখন কম্পিউটার ব্যবহার করি, তা ছিল এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। আমি জানতাম না যে, কম্পিউটারের মাধ্যমে আমি ভবিষ্যতে কি কি অসাধারণ কিছু করতে পারব, তবে তখন থেকেই আমার মনে হয়েছিল যে, এটা আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে চলেছে।”

এই সময়েই তিনি BASIC প্রোগ্রামিং ভাষার সাথে পরিচিত হন। কম্পিউটার ভাষা BASIC (Beginner’s All-purpose Symbolic Instruction Code) ছিল সেই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা। গেটস অল্প সময়ের মধ্যে এই ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করেন, এবং স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে প্রোগ্রামিংয়ের নতুন নতুন প্রকল্পে কাজ করতে শুরু করেন।

এছাড়া, গেটস এই সময়েই একটি মজার ঘটনা স্মরণ করেছেন, যখন তিনি এবং তার বন্ধু পল অ্যালেন একটি গণনা মেশিনের জন্য প্রোগ্রাম লিখেছিলেন। এই প্রথম সফল প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে গেটস নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তার ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি দুনিয়াতেই। গেটস বলেন, “আমরা প্রথম কোডিং শুরু করার পর বুঝতে পারলাম, কত কিছু নতুনভাবে তৈরি করা সম্ভব এবং এই প্রযুক্তি আমাদের হাতে কতটা শক্তি দিয়ে দিয়েছে।”

কম্পিউটারের প্রতি গেটসের আগ্রহ শুধু একাডেমিক স্তরে সীমাবদ্ধ ছিল না; তার মধ্যে এক নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রতি প্রবল আগ্রহ কাজ করছিল। তাঁর প্রাথমিক অভিজ্ঞতাগুলি তাকে শুধু জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করেনি, বরং তাকে শিখিয়েছিল যে, কোন নতুন ক্ষেত্র বা প্রযুক্তি ততদিন পর্যন্ত কিছুই না, যতদিন না সেটির প্রতি আপনাকে ভালোবাসা এবং আগ্রহ জন্মে।

এই সময়ের অভিজ্ঞতাগুলিই পরবর্তীতে গেটসকে পৃথিবীর অন্যতম সফল প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছিল। তিনি বুঝতে পারেন, প্রযুক্তির এই নতুন দুনিয়ায় প্রবেশ করে তিনি একদিন এমন কিছু করতে পারবেন, যা শুধুমাত্র নিজের জীবন নয়, পুরো পৃথিবীকে বদলে দিতে সক্ষম হবে।

বিল গেটসের জীবন এবং মাইক্রোসফটের ইতিহাসে পল অ্যালেনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পল অ্যালেন, গেটসের একজন পুরনো বন্ধু, তাঁর জীবনের প্রথম কম্পিউটার অভিজ্ঞতার অন্যতম সঙ্গী। তাদের বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার মাধ্যমে মাইক্রোসফটের পথচলা শুরু হয়েছিল। এটি ছিল ১৯৭০ সালের শেষ দিকে, যখন গেটস এবং অ্যালেনের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়। Bill Gates

পল অ্যালেন ছিলেন গেটসের মতোই এক অসাধারণ মেধাবী, তবে তার প্রধান আগ্রহ ছিল কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সম্পর্ক এবং উন্নয়ন নিয়ে। তারা প্রথম একসাথে কাজ শুরু করেন লেকসাইড স্কুলে, যেখানে তারা একটি টেলিপ্রিন্টার মেশিনের মাধ্যমে প্রোগ্রামিং শিখতে শুরু করেন। পরে, গেটস এবং অ্যালেন একসঙ্গে একটি সফটওয়্যার কোম্পানির ধারণা তৈরি করেন, যা তাদের পরবর্তী জীবনের মূলধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

তবে, তাদের একসাথে কাজ করার প্রথম প্রকল্প ছিল একটি হ্যাকিং কীর্তি, যা পরবর্তীতে তাদের ভবিষ্যত কর্মকাণ্ডের জন্য একটি টানেল হিসেবে কাজ করেছিল। একবার তারা একটি বড় কম্পিউটার কোম্পানি থেকে একটি সফটওয়্যার চুরি করেন, যা তারা একেবারে ফ্রি তে পুনরায় বিক্রি করেছিল। এই ঘটনাটি গেটসের জীবনে একটি মাইলফলক হিসেবে দাঁড়িয়েছিল এবং এই সময়েই তারা বুঝতে পারলেন, সফটওয়্যার তৈরি এবং বিক্রি করা সম্ভব।

বিল গেটস এই অভিজ্ঞতাটি স্মরণ করে বলেন, “পল এবং আমি বুঝতে পারলাম, আমাদের সফটওয়্যার তৈরি করার ধারণা সত্যিই কার্যকর হতে পারে। এটি ছিল আমাদের জীবনের প্রথম সফল প্রোগ্রামিং অভিজ্ঞতা, এবং এর পর আমরা নিজেদের ভবিষ্যতকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে শুরু করলাম।”

আরও পড়ুন: বেশিরভাগ জিন্স নীল হওয়ার কারণ কি?

১৯৭৫ সালে, মাইক্রোসফটের প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। গেটস এবং অ্যালেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং এর লক্ষ্য ছিল মাইক্রোসফট BASIC প্রোগ্রামিং ভাষার মাধ্যমে কম্পিউটারের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ আরও বাড়ানো। প্রথম দিকে তারা যে সফটওয়্যার তৈরি করেছিল তা ছিল Altair 8800 কম্পিউটারের জন্য। এই সফটওয়্যারটি মাইক্রোসফটের জন্য একটি বড় সাফল্য নিয়ে আসে, এবং এটি তাদের প্রতিষ্ঠার পরবর্তী বছরগুলিতে আরও বড় প্রকল্প গ্রহণের জন্য তাদের প্রস্তুত করে।

গেটস বলেন, “আমরা খুব কম বয়সেই বুঝে গিয়েছিলাম, কম্পিউটার শুধুমাত্র একটি গেম বা টুল নয়, এটি ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। আমাদের সফটওয়্যার তৈরি করার চিন্তা ছিল, আমাদের জীবনটাকে বদলে দেওয়ার মতো কিছু করতে হবে।”

এই সময় থেকেই গেটস এবং অ্যালেনের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে এবং মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠা তাদের দুজনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের একসাথে কাজ করার স্বপ্ন এবং পরিশ্রমই পরবর্তীতে মাইক্রোসফটকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হয়েছিল।

মাইক্রোসফটের সূচনার পর, বিল গেটসের জীবনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়। পল অ্যালেনের সঙ্গে তাঁর সহযোগিতা শুধুমাত্র প্রযুক্তি দুনিয়াতেই নয়, তাঁদের সম্পর্ক ছিল আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক – এটি ছিল বন্ধুত্ব, বিশ্বাস এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধার সম্পর্ক।

বিল গেটসের শৈশব শুধু একাডেমিক বা প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; তার পরিবার তাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধও শিখিয়েছিল, যা তার ব্যক্তিত্ব এবং ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গেটসের মা, মেরি গেটস, ছিলেন একজন অত্যন্ত শিক্ষিত এবং সামাজিক দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ মহিলা। তিনি সবসময় গেটসকে শিখিয়েছিলেন, যে একজন ব্যক্তি যতটা সফল হতে পারে, ততটাই তার দায়িত্বও থাকে সমাজের প্রতি।

বিল গেটস তার জীবনের একটি স্মৃতিতে উল্লেখ করেছেন, “আমার মা আমাকে সবসময় বলতেন, ‘যত বড় তুমি হবে, তোমার দায়িত্বও তত বড় হবে। তোমার সফলতার মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতারও স্থান রয়েছে।’” গেটসের মা তাকে সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা, সহানুভূতি এবং দায়িত্বশীলতা শেখাতেন, যাতে তিনি শুধু একজন সফল ব্যক্তি না, বরং একজন ভালো মানুষ হিসেবেও সমাজে অবদান রাখতে পারেন। তার বাবা, উইলিয়াম গেটস,ও একইভাবে তাকে নৈতিকতা ও নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি দায়বদ্ধতা শেখাতেন।

আরও পড়ুন: চন্দ্রযান-৩ এর চন্দ্র জয়ের কথা

গেটসের শৈশবে, তার পরিবারে সবার প্রতি সহানুভূতি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি গুরুত্ব ছিল। গেটস তার জীবনের বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, যে তার মা-বাবা তাঁকে শিখিয়েছিলেন যে, দান করা এবং অন্যদের সাহায্য করা শুধুমাত্র অর্থের মাধ্যমে নয়, বরং সময়, সহানুভূতি এবং শিক্ষার মাধ্যমেও হতে পারে। এই শিক্ষা পরবর্তীতে গেটসের দাতব্য কার্যক্রম এবং তাঁর ফাউন্ডেশন “বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন”-এর মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

গেটস, তার শৈশবেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, ব্যক্তিগত সাফল্যের পাশাপাশি, তার সমাজের প্রতি অবদান রাখা জরুরি। তার পরিবার তাকে প্রতিটি ছোট বড় কাজের জন্য দায়িত্বশীল থাকতে শিখিয়েছিল, এবং এই মূল্যবোধ তাকে পরবর্তী জীবনে একজন সমাজসেবী, দাতব্য কাজের প্রতি আগ্রহী এবং নৈতিকভাবে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে।

এছাড়া, গেটসের পরিবার তাকে সবসময় প্রেরণা দিয়েছে যে, জ্ঞান অর্জন কেবল নিজের জন্য নয়, বরং সমাজের কল্যাণে কাজে লাগানো উচিত। এই শিখন তাকে দান ও দাতব্য কার্যক্রমের প্রতি আগ্রহী করে তোলে এবং পরবর্তীতে তার প্রভাবশালী দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে এই শিক্ষার বিশাল ভূমিকা ছিল।

বিল গেটস নিজের শৈশবের সময়গুলো মনে করে বলেন, “আমার শৈশবের স্মৃতির মধ্যে সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল, যে জানো, তুমি যদি নিজেকে এবং সমাজকে উন্নত করতে চাও, তাহলে তোমার দায়িত্ব রয়েছে সকলের জন্য কিছু করতে।”

তার শৈশবের শিক্ষাগুলো তাকে এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে, যা পরবর্তীতে তার কর্মজীবনে তাকে শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী নয়, বরং একজন সামাজিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

Share This Post
Scroll to Top