পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা দেশ কোনটি?

বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পরিবেশের অবস্থা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মান ভিন্ন। কিছু দেশ প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার না করার কারণে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং শিল্প দূষণের কারণে পরিচ্ছন্নতার মানে পিছিয়ে রয়েছে। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা দেশ কোনটি তা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

নোংরা দেশের তালিকায় ভারত

ভারতের বড় শহরগুলোর বায়ু দূষণ এবং জলবায়ু সমস্যা ব্যাপক। শিল্পায়নের ফলে বায়ুমণ্ডলে দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক।

ভারতের কিছু রাজ্য পরিবেশগত কারণে সবচেয়ে নোংরা হিসেবে পরিচিত। নিম্নলিখিত রাজ্যগুলো উল্লেখযোগ্য:

কারণ: যানজট ও যানবাহনের কারণে উচ্চ বায়ু দূষণ। নির্মাণকাজের ফলে ধূলিকণা বৃদ্ধি। এছাড়া আশেপাশের গ্রামীণ এলাকায় ফসল কাটার পর খড়গুলো পোড়ানো হয় এবং সেগুলোর ধোঁয়া দিল্লিকে প্রচুর পরিমাণে দূষিত ও নোংরা করে।

কারণ: নদী দূষণ, বিশেষ করে গঙ্গা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব।

কারণ: শিল্প দূষণ এবং বর্জ্য পরিষ্কারের দুর্বল ব্যবস্থা। কৃষিকাজের জন্য রাসায়নিকের অতিরিক্ত ব্যবহার।

কারণ: কয়লা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের জন্য খননের ফলে পরিবেশের ক্ষতি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব।

কারণ: মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরে যানবাহনের কারণে বায়ু দূষণ। শিল্প অঞ্চলগুলোর নিকটবর্তী জলাশয় ও মাটি দূষিত।

আরও পড়ুন: ঢাকা নগরী বিভিন্ন স্থানের নামকরণ

এই রাজ্যগুলোর পরিবেশগত সমস্যা মূলত নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবের কারণে। সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি।

বাংলাদেশ

শিল্প দূষণ, নদীর পানি দূষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বাংলাদেশের পরিবেশ সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা জেলা সবচেয়ে দূষিত হিসেবে পরিচিত। এর মূল কারণগুলো হল:

১. বায়ু দূষণ

যানজট: ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি, যা বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।

কনস্ট্রাকশন: নির্মাণকাজের কারণে ধূলিকণা বৃদ্ধি পায়।

২. পানি দূষণ

নদীর দূষণ: তুরাগ, বুরিগঙ্গা এবং অন্যান্য নদীতে শিল্প ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হয়, যা পানির মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।

৩. আবর্জনা

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব: শহরের আবর্জনার যথাযথ ব্যবস্থাপনা না হওয়ার কারণে সড়ক, নালা ও নদী নোংরা হয়ে যায়।

৪. শিল্প দূষণ

কারখানা: ঢাকার আশেপাশে অবস্থিত অনেক শিল্প কারখানা বর্জ্য এবং দূষক নিঃসরণ করে, যা পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ঢাকার দূষণ কমানোর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশবান্ধব নীতির বাস্তবায়ন।

পাকিস্তান

বায়ু এবং জলদূষণের কারণে পাকিস্তান এক ভঙ্গুর পরিবেশের মুখোমুখি। শহরগুলোর বায়ুর মান উদ্বেগজনক।

পাকিস্তানের মধ্যে কারাচি শহর সবচেয়ে দূষিত হিসেবে পরিচিত। এর প্রধান কারণগুলো হল:

১. বায়ু দূষণ

যানবাহন: শহরের যানবাহনের অতিরিক্ত সংখ্যা এবং পুরনো গাড়ির ব্যবহার বায়ু দূষণের জন্য দায়ী।

শিল্প: কারখানাগুলো থেকে নিঃসৃত দূষণকারী পদার্থ বায়ুতে মিশে যায়।

২. পানি দূষণ

নদী ও জলাশয়: শহরের নদী ও জলাশয়ে শিল্প বর্জ্য এবং গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলা হয়, যা পানির মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৩. আবর্জনা

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব: শহরের সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে আবর্জনা সড়কে জমে থাকে।

৪. নগরায়ণ

অবকাঠামো সমস্যা: দ্রুত নগরায়ণের ফলে আবাসিক এলাকায় ও বাণিজ্যিক অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যা পরিবেশকে আরও নোংরা করে।

কারাচির দূষণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে পরিবেশবান্ধব নীতি, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

নেপাল

নেপালের পর্যটন এলাকা ও শহরগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব এবং যানবাহনের কারণে বায়ু দূষণ বেড়েছে।

নেপাল বিভিন্ন কারণে পরিবেশগত সমস্যায় আক্রান্ত, যা নোংরার কারণ হিসেবে কাজ করে:

জেনে নিন: বেশিরভাগ জিন্স নীল হওয়ার কারণ কি?

১. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব

অব্যবস্থাপনা: শহরগুলিতে বর্জ্য সংগ্রহ ও নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা নেই, ফলে রাস্তার পাশে ও জলাশয়ে আবর্জনা জমে থাকে।

২. বায়ু দূষণ

যানবাহন: যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানোর ফলে বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে কাঠমান্ডুর মতো বড় শহরে।

গৃহস্থালি জ্বালানি: কাঠ ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে বাতাসে ক্ষতিকর পদার্থ প্রবাহিত হয়।

৩. নদী দূষণ

শিল্প ও গৃহস্থালি বর্জ্য: নদীগুলিতে শিল্প বর্জ্য এবং গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলা হয়, যা পানির মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।

৪. বন উজাড়

অরণ্য ধ্বংস: বন উজাড়ের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা ভূমিক্ষয় এবং অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করছে।

৫. পর্যটন চাপ

অতিরিক্ত পর্যটন: পর্যটনের চাপ স্থানীয় পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে জনপ্রিয় হিমালয় অঞ্চলে।

নেপালের পরিবেশ পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য কার্যকরী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন কৌশল প্রয়োজন।

চীন

চীন পরিবেশগত সমস্যায় আক্রান্ত, এবং এর প্রধান কারণগুলো হল:

বিশাল শিল্পায়ন এবং কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে চীনের বায়ু এবং জলদূষণ মারাত্মক।

১. শিল্পায়ন

বড় শিল্প কারখানা: চীনের দ্রুত শিল্পায়নের ফলে বায়ু ও জলদূষণ বেড়ে গেছে। অনেক কারখানা প্রয়োজনীয় পরিবেশগত নীতির অনুসরণ করে না।

২. কয়লা নির্ভরতা

শক্তি উৎপাদন: চীনের শক্তির বড় অংশ কয়লা থেকে আসে, যা উচ্চমাত্রার কার্বন নিঃসরণ এবং বায়ু দূষণ করে।

৩. যানবাহন

গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি: শহরে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক বেশি।

৪. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব

অবকাঠামোগত দুর্বলতা: অনেক শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর ব্যবস্থা নেই, ফলে আবর্জনা জমে থাকে।

সবচেয়ে দূষিত শহর

বেইজিং সাধারণত চীনের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে বিবেচিত হয়। বায়ু দূষণ, বিশেষ করে শীতকালে, সেখানে মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

চীনের দূষণ কমানোর জন্য প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব নীতি এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি।

মেক্সিকো

নগরায়ণের কারণে মেক্সিকো সিটির বায়ু দূষণ অনেক বেশি। এছাড়া নদী এবং জলাশয়গুলোও দূষিত।

মেক্সিকোর দূষণের কিছু প্রধান কারণ হলো:

১. যানবাহন

মেক্সিকো সিটিতে যানবাহনের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। পুরোনো ও অকার্যকর যানবাহন বায়ুদূষণের প্রধান উৎস।

২. শিল্পায়ন

বিভিন্ন শিল্পকারখানার কার্যক্রম থেকে নির্গত বর্জ্য এবং বায়ু দূষণ পরিবেশকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।

৩. ভূপৃষ্ঠের গ্যাস

মেক্সিকোতে গ্যাস ও তেলের উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াকরণও দূষণের একটি বড় কারণ। এগুলি বায়ু ও জল উভয়কেই দূষিত করে।

৪. অগ্নিকাণ্ড

কিছু অঞ্চলে প্রতি বছর গ্রীষ্মে বন আগুনের ঘটনা ঘটে, যা বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ায়।

৫. আবহাওয়া

মেক্সিকো সিটির ভূ-অবস্থান ও আবহাওয়া অনেক সময় দূষিত বায়ুকে সঞ্চয় করতে সাহায্য করে, ফলে দূষণের মাত্রা বাড়ে।

এ কারণে, মেক্সিকো দূষণের একটি গুরুতর সমস্যা মোকাবেলা করছে, যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সবচেয়ে নোংরা দেশ

নাইজেরিয়ার নোংরার প্রধান কারণগুলো হলো:

১. শিল্প দূষণ

নাইজেরিয়ায় তেল উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের কারণে ব্যাপক দূষণ ঘটে। তেল ছড়িয়ে পড়া এবং গ্যাস ফ্লেয়ারিং উল্লেখযোগ্য সমস্যা।

২. আবর্জনা ব্যবস্থাপনার অভাব

শহরাঞ্চলে আবর্জনা সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় রাস্তাঘাটে জমে থাকে, যা পরিবেশকে নোংরা করে তোলে।

৩. জলদূষণ

নদী ও জলাশয়ে শিল্প বর্জ্য এবং গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলায় পানির গুণগত মান খারাপ হচ্ছে।

৪. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা

বহু অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা ও স্যানিটেশনের অভাব, যা বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি করে।

৫. জনসংখ্যা চাপ

বাড়তে থাকা জনসংখ্যা এবং নগরায়ণ সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে।

এই সব কারণে, নাইজেরিয়া একটি গুরুতর পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

আরও পড়ুন: কানাডা নিয়ে মিসকনসেপশন ও আপনার করনীয়

উগান্ডার নোংরার কারণগুলো হলো:

১. বায়ুদূষণ

শিল্পায়ন ও যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বায়ুদূষণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কেম্পালার মতো শহরগুলিতে।

২. আবর্জনা ব্যবস্থাপনার অভাব

অতিরিক্ত আবর্জনা জমে থাকার কারণে শহরের অনেক জায়গা নোংরা হয়ে যায়। সঠিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই।

৩. জলদূষণ

নদী ও জলাশয়ে গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য ফেলায় পানির গুণমান খারাপ হচ্ছে। তাতে স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে।

৪. কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিকের ব্যবহার

কৃষিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক fertilizers এবং pesticides ব্যবহারের ফলে মাটির গুণমান ও পানির দূষণ ঘটছে।

৫. স্বাস্থ্যসেবা অভাব

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং সঠিক স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে।

এই কারণে, উগান্ডা একটি গুরুতর পরিবেশগত সংকটের সম্মুখীন।

এই দেশটি দরিদ্র সেই সাথে খুবই নোংরা।

সেনেগালের নোংরার প্রধান কারণগুলো হলো:

১. বায়ুদূষণ

শহরাঞ্চলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও শিল্পায়নের কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে।

২. আবর্জনা ব্যবস্থাপনার অভাব

সঠিক আবর্জনা সংগ্রহ ও নিষ্কাশনের অভাবে শহরগুলোতে আবর্জনা জমে থাকে, যা পরিবেশকে নোংরা করে।

৩. জলদূষণ

নদী ও জলাশয়ে গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য ফেলায় পানির গুণমান খারাপ হচ্ছে।

৪. স্যানিটেশন সমস্যা

অনেক অঞ্চলে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।

৫. জনসংখ্যা চাপ

বাড়তে থাকা জনসংখ্যা এবং নগরায়ণ দূষণের সমস্যা আরও জটিল করে তোলে।

এই কারণে, সেনেগাল একটি গুরুতর পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

এই দেশগুলোর পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলা করতে হলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নত প্রযুক্তি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে এই সমস্যাগুলো সমাধানের দিকে এগোতে হবে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিশ্বজুড়ে একত্রিত প্রচেষ্টা জরুরি। তবে একটি কিন্তু আছে। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো বাহ্যিকভাবে অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন লাগলেও, সারা পৃথিবীতে এরাই সবচাইতে বেশি আবর্জনা উৎপন্ন করে এবং দূষণ করে। তাদের তৈরিকৃত দূষণ সারা পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা দেশ সবগুলো দেশের দূষণের চাইতেও বেশি। তারা মাঝেমধ্যেই পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। এতে করে যে কী পরিমান পরিবেশের ক্ষতি হয়— তা কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা মতো কেউ নেই।

Share This Post
Scroll to Top