পলিপ হল শরীরের মিউকাস মেমব্রেনে গঠিত নরম, মাংসল বা ক্ষুদ্র টিউমার। এটি সাধারণত মিউকাস ঝিল্লিতে দেখা যায়, যা নাকের অভ্যন্তরে নরম গোলাপিবর্ণের দেখায়। পলিপ সাধারণত গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির এবং আকারে বিভিন্ন হতে পারে।

পলিপ সাধারণত প্রদাহের কারণে ঘটে, যেখানে মিউকাস মেমব্রেনের কোষগুলি অতিরিক্ত সিক্রেশন এবং ইডেমার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। ইডেমা মানে শরীরের টিস্যুগুলিতে অতিরিক্ত তরল জমা হওয়া, যা পলিপের আকার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি স্থানীয় প্রদাহের ফলে হতে পারে, যেমন অ্যালার্জি বা সংক্রমণের কারণে।
পলিপ সাধারণত ব্যথাহীন হয় এবং এটি সাধারণত লক্ষণহীন হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে, পলিপের কারণে নাক বন্ধ হওয়া, শ্বাস নিতে সমস্যা বা রক্তপাতের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
নাকের পলিপ হওয়ার কারণ
পলিপ গঠনের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এখানে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হল:
১. অ্যালার্জি
নাকের পলিপ সাধারণত অ্যালার্জির কারণে ঘটে, যেখানে ধূলিকণা, ফুলের পরাগ বা পশুর লোমের মতো অ্যালার্জেনের প্রতি সংবেদনশীলতা প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহ মিউকাস মেমব্রেনে ইডেমা সৃষ্টি করে, যা পলিপের জন্ম দেয়।
২. দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ
যদি নাকের বা শ্বাসনালীর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ঘটে, যেমন সাইনোসাইটিস, তাহলে মিউকাস মেমব্রেনে পরিবর্তন আসতে পারে এবং পলিপ গঠিত হতে পারে। প্রদাহজনিত অবস্থার ফলে কোষগুলির বৃদ্ধি ঘটতে পারে, যা পলিপের আকারে প্রকাশ পায়।
৩. সংক্রমণ
ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ পলিপ গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ মিউকাস মেমব্রেনকে আক্রমণ করে, যার ফলে পলিপ তৈরি হয়।
৪. ফুসফুসের রোগ
অ্যাজমা, সিস্টিক ফাইব্রোসিস বা অন্যান্য ফুসফুসের রোগের ফলে শ্বাসনালীতে অতিরিক্ত প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এই অবস্থাগুলো মিউকাস মেমব্রেনের অবকাঠামো পরিবর্তন করে এবং পলিপের সৃষ্টি করে।
৫. হরমোনাল পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার সময় বা হরমোনাল থেরাপির কারণে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন পলিপ গঠনের জন্য প্রভাব ফেলতে পারে।
৬. জেনেটিক প্রবণতা
পারিবারিক ইতিহাস বা জেনেটিক কারণে কিছু ব্যক্তির মধ্যে পলিপ গঠনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৭. পরিবেশগত কারণ
বায়ূদূষণ, ধোঁয়া, এবং রাসায়নিকের সংস্পর্শ পলিপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, কারণ এগুলি মিউকাস মেমব্রেনের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
নাকের পলিপ-এর লক্ষণ

নাকের পলিপের লক্ষণগুলি সাধারণত নিম্নরূপ:
১. নাক বন্ধ হওয়া
নাসাল পলিপের কারণে শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে, ফলে নাক বন্ধ হওয়ার অনুভূতি হয়।
২. ঘ্রাণের অনুভূতি কমে যাওয়া
পলিপ থাকলে ঘ্রাণের ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, যা খাবার এবং পরিবেশের ঘ্রাণ অনুভব করতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
৩. মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া
নাক বন্ধ থাকার কারণে অনেক সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হতে পারে।
৪. মাথাব্যথা
নাসাল পলিপের কারণে চাপ অনুভব করতে পারে, যা মাথাব্যথার সৃষ্টি করে।
৫. নাসারন্ধ্র থেকে রক্তপাত
কখনও কখনও নাসারন্ধ্র থেকে রক্তপাত হতে পারে।
৬. শ্বাসকষ্ট
পলিপের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, বিশেষ করে শারীরিক exertion-এর সময়।
৭. সর্দি বা কাশি
নাসাল পলিপের কারণে সর্দি বা কাশি হতে পারে, যা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়।
যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি উপস্থিত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
নাকের পলিপের চিকিৎসা
নাকের পলিপের চিকিৎসা সাধারণত তাদের আকার, অবস্থান এবং উপসর্গের উপর নির্ভর করে। চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো উপসর্গ হ্রাস করা এবং পলিপগুলির আকার ছোট করা বা অপসারণ করা। এখানে কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
১. ঔষধ
স্টেরয়েড নাকের স্প্রে: এটি সাধারণত প্রথম লাইনের চিকিৎসা। স্টেরয়েড স্প্রে ব্যবহার করলে প্রদাহ কমে যায় এবং পলিপের আকার ছোট হতে পারে।
অ্যান্টিহিস্টামিন: অ্যালার্জির কারণে পলিপ সৃষ্টি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যালার্জির উপসর্গ কমাতে সহায়ক।
নাকের ডেকনজেস্ট্যান্ট: এটি সাময়িকভাবে নাকের বন্ধ ভাব কমাতে সাহায্য করে।
২. সলিউশন এবং সল্টওয়াটার রিন্স
সালাইন রিন্স: নাসারন্ধ্র পরিষ্কার রাখতে এবং মিউকাস কমাতে সালাইন সলিউশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি স্বাভাবিক মিউকাস কোষ উৎপাদনকে অব্যহত করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৩. সার্জারি
যদি ঔষধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর না হয়, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত, পলিপ অপসারণের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহৃত হয়:
ফাংশনাল এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি (FESS): এই পদ্ধতিতে নাসারন্ধ্রের ভেতরে থেকে পলিপ অপসারণ করা হয়। এটি ব্যাথাহীন এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারের সুবিধা প্রদান করে।
সার্জিক্যাল রিমোভাল: যদি পলিপগুলি বড় হয় বা গুরুতর উপসর্গ সৃষ্টি করে, তবে সেগুলি কেটে অপসারণ করা হতে পারে।
৪. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ
কিছু ক্ষেত্রে, যদি পলিপ ছোট এবং লক্ষণহীন হয়, তবে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হতে পারে। রোগীর উপসর্গের উপর নজর রাখা এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসা শুরু করা।
পরামর্শ
ডাক্তার পরামর্শ: চিকিৎসা শুরু করার আগে একটি ENT (কর্ণ, নাক ও গলা) বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।
লাইফস্টাইল পরিবর্তন: ধূমপান বা দূষণ থেকে দূরে থাকা, অ্যালার্জি ট্রিগারগুলিকে চিহ্নিত করা এবং শ্বাসনালীর স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
ভুল চিকিৎসায় বড় ক্ষতি
সস্তায় চিকিৎসা করার জন্য মানুষজন অনেক সময় হাতুড়ে ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়। কবিরাজের কাছে যায়। ওরা তুলোর মধ্যে এসিড জাতীয় কিছু মিশিয়ে নাকের টারবিনেটে লাগিয়ে দেয়। ফলে সেটি গলে যায় এবং বলা হয়— নাকের পলিপ গলে গেছে বা ছোট হয়ে গেছে।
এভাবে ভুল চিকিৎসায় নাকের স্থায়ী ক্ষতি সাধিত হয়। পরবর্তীতে নাক বসে যায় বা ত্বক পুড়ে যায়। ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে।
উপসংহার
নাকের পলিপ হলে এর যথেষ্ট উন্নত চিকিৎসা দেশে আছে। ভালো ডাক্তারের কাছে গিয়ে এর চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু সস্তার খাতিরে কবিরাজের শরনাপন্ন হয়ে নিজের ক্ষতি ডেকে আনা বুদ্ধিমানের কাজ না।
এছাড়া যে সকল বস্তুতে এলার্জি, সে সব জিনিস থেকে দূরে থাকা উচিত। নাকের যত্ন নিতে হবে।

সম্মানিত ভিজিটর আমি আব্দুল কাইয়ুম, পেশায় আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী। ব্লগ বলেন আর সংবাদ বলেন এটাই আমার নেশা ও পেশা। এই ব্লগের মাধ্যমে ভিজিটরদের সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করাই আমার ছোট্ট প্রয়াস মাত্র।