যে অবস্থায় করতেই হবে ফরজ গোসল

সু-স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য প্রতিদিনই আমাদের গোসল করতে হয়। আবার হজ্ব কিংবা ওমরার জন্য ইহরামের আগে এবং জুমার দিন অবশ্যই গোসল করতে হয় আমাদের। এছাড়া কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হতেও গোসলের প্রয়োজন। বহু হাদিসে এসব কাজের আগে গোসল করার প্রতি খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এমন তিনটি কারণ আছে, যেসব অবস্থায় গোসল করা ফরজ। অথার্ৎ একে ‘ফরজ গোসল’ বলে অভিহিত করা হয়ে তাকে। এমন অবস্থায় গোসল না করলে পবিত্র হওয়া যায় না। আজকের আর্টিকেলে পাবেন যে অবস্থায় করতেই হবে ফরজ গোসল সে বিষয়ে।

চলুন যেনে আসি; ওই কারণগুলো কী? আর কীভাবে সে গোসল করতে হয়?

সাধারণত কোন মানুষ অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য যে গোসল বাধ্যতামূলক করতে হয় তাই ফরজ গোসল। আর সেটি তিনটি অবস্থায় ফরজ গোসল হয়। এমন সময়ে গোসল না করলে অপবিত্র থাকতে হয়।

যেসব কারণে হয় ফরজ গোসল :

মানুষ ঘুম কিংবা জেগে থাকা অবস্থায় শারীরিক উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হলে সে ব্যক্তির ওপর গোসল করা ফরজ। এ ব্যক্তি গোসল না করা পর্যন্ত অপবিত্র থাকবে।

অন্যদিকে ঘুমে থাকা অবস্থায় উত্তেজনা অনুভব না হলেও গোসল করতে হবে। কেননা অনেক সময় ঘুমে মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে টের পাওয়া যায় না। তাই ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর যদি কাপড়ে নাপাকির এমন কোন চিহ্ন দেখা যায় আর সেক্ষেত্রে স্বপ্ন দোষের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক গোসল করা ফরজ। (হেদায়া)

স্বামী—স্ত্রী সহবাস করলে উভয়ের জন্য গোসল করা ফরজ। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর গোপনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই দু’জনের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে। তাতে বীর্যপাত হোক বা না হোক; স্বামী—স্ত্রী গোসল করতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)

আরও পড়ুন: নিয়মিত মাসিক না হলে করনীয় কি

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সঙ্গত হলে (সহবাস করলে), তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারি)

যে কোন নারীর মাসিক ঋতুস্রাব (হায়েজ) বন্ধ হলে এবং সন্তান প্রসব করার পর রক্তপাত (নেফাস) বন্ধ হলে পবিত্রতার জন্য গোসল করা ফরজ। যতদিন একজন নারীর রক্ত বন্ধ না হবে ততদিন ব্যক্তি অপবিত্র থাকবে।

মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে নারী—পুরুষের যৌনমিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাতের মাধ্যমে কিংবা হাফেজ—নেফাসের কারণে অপবিত্র হলে তাকে পবিত্রতা হওয়ার নির্দেশ দেন এভাবে—

وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ

‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ০৬)

ফরজ গোসল

পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্র পানি দ্বারা পুরো শরীর ধোয়াকে ‘গোসল’ বলা হয়। আর এ ৩টি কাজ করার মাধ্যমে এ ফরজ গোসল করতেই হবে। যথাযথভাবে এ তিনটি কাজ আদায় না করলে গোসলের ফরজ আদায় হবে না।

তিনটি কাজ হলো ;—

১. কুলি করা। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)।

২. নাকে পানি দেওয়া। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)।

৩. দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও যেন শুকনো না থাকে তেমনভাবে সারা শরীর পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে। (আবু দাউদ)

আরও পড়ুন: প্রেমের বিয়েতে পরিবারের অসম্মতি এবার কি করবেন?

তবে ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম নিয়ম হলো —

১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم) বলে গোসল শুরু করা। সাবধান, গোসলখানা ও টয়লেট একসঙ্গে হলে ‘বিসমিল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করে বলা যাবে না।

২. হাত ধোয়া। অর্থাৎ উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধোয়া।

৩. লজ্জাস্থান ধোয়া। বাম হাতের পানি দ্বারা লজ্জাস্থান পরিষ্কার করতে হবে। সম্ভব হলে ইস্তিঞ্জা তথা প্র¯্রাব করে নিতে পারো। এতে খুব সহজেই নাকাপি সম্পূর্ণরূপে বাহিরে বের হয়ে যায়।

৪. নাপাকি ধোয়া। শরীরের বা কাপড়ে কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা ভালো ধুয়ে নেওয়া।

৫. ওযু করা। পা ধোয়ার সাথে নামাজের মতো ওজু করে নেওয়া।

৬. এরপর ফরজ গোসলের তিন হচ্ছে —

কুলি করা,

নাকে পানি দেওয়া এবং

সারা শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। একটি লোমকুপও যেন শরীরের শুকনো না থাকে।

৭. পা ধোয়া। গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে সবশেষে উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।

আরো পড়ুন: জানেন স্বামীর কাছে কি সব গোপন রাখেন বেশিরভাগ স্ত্রী ?

মহান আল্লাহ তা’আলা সকল মুসলিম উম্মাহকে ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখার সাথে যথাযথভাবে ফরজ গোসল করার যেন তাওফিক দান করেন। আমিন।

Share This Post
Scroll to Top