এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হবেন যেভাবে

এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো করার জন্য পর্যাপ্ত পড়ালেখার বিকল্প নেই। পরীক্ষার জন্য শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। তবুও পরীক্ষাকালীন সময়ে আমাদের কিছু বাড়তি প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। তাই এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হয়ে ভালো ফলাফল করতে কার্যকরী উপায়গুলো জেনে নিন এখানে।

এইচএসসি পরীক্ষার হলরুমে করনীয় বিষয়গুলোবর্তমানে এইচএসসি পরীক্ষা চলমান রয়েছে। পরীক্ষার হলরুমের সময়টুকু আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার হলরুমে আমাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। যে প্রশ্নগুলো সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা রয়েছে সেগুলোই প্রথমে লিখতে হবে।

অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার সময় প্রথমে ধীরে ধীরে লিখে। তবে পরীক্ষার সময় শেষপ্রান্তে এলে খুব দ্রুত লিখেও সকল প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারে না। এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই সম্পূর্ণ উদ্যমে লিখতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য নির্দিষ্ট সময় সেট করে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এবং সময়মতো সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।

পরীক্ষার শেষপ্রান্তের ১০ মিনিট সময় লিখিত উত্তরপত্র পুনর্বিবেচনা/রিভিশনের জন্য রাখতে হবে। সর্বোপরি শান্তশিষ্ট ভাবে এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হয়ে উত্তরপত্র লিখতে হবে।
পড়া মনে রাখার দোয়া ও আমল
এইচএসসি পরীক্ষা আমাদের মনের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী একটি বিষয়। তাই এক্ষেত্রে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। পড়া মনে রাখার কার্যকরী দোয়াগুলো হলোঃ

১) আরবি: رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا

বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বি যিদনী ইলমা”।

বাংলা অর্থ: “হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করো।”

২) আরবি: رَبِّ ٱشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَٱحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا۟ قَوْلِى

বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বিশ রাহলী সদরী ওয়া ইসসিরলী আমরী, ওয়াহ-লুল ওক্বদাতাম মিল্ লিসানী ইয়াফক্বাহূ ক্বওলী।”

বাংলা অর্থ: “হে আমার রব! তুমি আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও, আমার কাজ সহজ করে দাও এবং আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে।” (সুরা তোয়াহা: ২৫-২৮)

এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হতে করনীয়

পরীক্ষায় মনোযোগী হতে লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে হবে। নিচে পড়ালেখা মনোযোগী হওয়ার কার্যকর উপায়গুলো তুলে ধরা হলোঃ

এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী

(১) নিয়মিত পড়ালেখা করা

পরীক্ষায় মনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত পড়ালেখার বিকল্প নেই। যে যত বেশি পড়ালেখা করবে সে তত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। একটি বিখ্যাত প্রবাদ প্রচলিত আছে যে- “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” অর্থাৎ নিয়মিত পড়ালেখা না করলে, আপনার মস্তিষ্কে পড়ালেখার পরিবর্তে অন্য কিছু বাসা বেঁধে মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।

ইংরেজিতে আরো একটি প্রবাদ রয়েছে যে- “Practise makes a man perfect”। তাই আপনি যত বেশি পড়ালেখার চর্চা করবেন তত বেশি দক্ষ এবং মনোযোগী হয়ে উঠবেন।

(২) একনাগাড়ে বেশিক্ষণ না পড়া

(২) একনাগাড়ে বেশিক্ষণ না পড়া
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অনেক শিক্ষার্থী একনাগাড়ে দিনভর পড়ালেখায় আত্মনিয়োগ করে। এক্ষেত্রে ভালোর চেয়ে খারাপ ফলটাই বেশি লক্ষণীয় হয়। দীর্ঘক্ষণ করতে থাকলে আমাদের মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা প্রভাবিত হয়। মনে একঘেয়েমি চলে আসে।

ফলে একনাগাড়ে পড়তে থাকলেও পরবর্তীতে সেই পড়া মনে রাখা সম্ভব হয় না। এমন হলে এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হওয়া কঠিন। তাই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে, একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসা, চা পান করা, কিছুটা বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

(৩) মুখস্থ না করে বুঝে পড়ো

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় অংশ মুখস্থবিদ্যার উপর নির্ভরশীল। যে কোন বিষয় মুখস্ত করার মাধ্যমে তার সঠিক তথ্য উপলব্ধি করা সম্ভব হয় না। তবে বুঝে পড়তে পারলে মুখস্ত করারও প্রয়োজন হয় না।

শিক্ষাজীবনে সফল হওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে বুঝে পড়া। আপনি কোন বিষয়ে জানার জন্য পড়লে/জ্ঞানার্জনের ইচ্ছায় পড়লে খুব দ্রুত তা মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারবেন। যেটা মুখস্ত করার ক্ষেত্রে সময়সাপেক্ষ।

(৪) লেখাপড়ায় কৌশলী হওয়া

লেখাপড়ায় পরিশ্রমী হওয়ার পাশাপাশি কৌশলী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বছরব্যাপী দীর্ঘ সময় লেখাপড়া করেও অনেক সময় বিষয়ভিত্তিক সঠিক তথ্য আয়ত্ত করা যায় না। তবে গতানুগতিক পড়ার ধরনের উপর আত্মনিয়োগ না করে সৃজনশীলতার মাধ্যমে কৌশলী হয়ে নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে পারলে এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হতে পারবেন।

অনেক মেলাতে শিক্ষার্থী রয়েছে যারা অল্প পড়েও সঠিক জ্ঞানার্জন করতে পারে। তাই সেভাবে নিজেকে গড়তে নিজের একটি ইউনিক পড়ার ধরন তৈরি করুন। জানার জন্য পড়ুন, রেজাল্ট ভালো করার জন্য নয়। রেজাল্টের উপর মনোযোগ না দিয়ে, শিক্ষার উপর মনোযোগ দিলে পরীক্ষায় সহজেই ভালো করতে পারবেন।

(৫) কঠিন পড়াগুলো আগে চর্চা করা

পাঠ্যবইয়ের অধ্যায়গুলো পড়ার ক্ষেত্রে আমরা সহজ অধ্যায়গুলো আগে পড়ি। এবং কঠিন পড়া গুলো পরবর্তী সময়ের জন্য জমিয়ে রাখি। এতে করে কঠিন করা গুলো জানতে থাকে এবং আমাদের মাথায় অনেক বেশি বোঝা অনুভূত হয়। তাই প্রথমে কঠিন পড়া গুলো শেষ করতে হবে। কঠিন বিষয় গুলো আগে আয়ত্ত করলে মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এবং পরবর্তী বিষয়গুলো আরও সহজ হয়ে ওঠে।

(৬) পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া

পরীক্ষার সময় পড়ালেখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার পূর্বে গভীর রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার দিন শারীরিকভাবে দুর্বলতা অনুভব হয়, মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা লোপ পায়, পরীক্ষার সময় একঘেয়েমি চলে আসে।

পড়ালেখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। এবং পড়ার ফাঁকে ফাঁকে হালকা বিশ্রাম নিয়ে মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করে নিন।

(৭) ব্যায়াম ও মেডিটেশন করা

নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের দেহ এবং মন উভয়ই ভালো রাখে। প্রতিদিন কিছু সময় হালকা ও মাঝারি ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে সকালে খোলা পরিবেশে কিছুক্ষণ দৌড়ালে চিন্তাশীলতা/ সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায় বলে জানা যায়।

তাছাড়া মেডিটেশন করলে আমাদের মনোযোগ তীক্ষ্ণ হয়। এরপরে আমাদের ব্রেনে এলোপাথাড়ি নানা ধরনের চিন্তাভাবনা আসতে পারে না। এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী বৃদ্ধি পাবে অনেক বেশি।

(৮) সময়ের সদ্ব্যবহার করা

শিক্ষাজীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময়ের সদ্ব্যবহার করা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই যে যত বেশি সময়ের সদ্ব্যবহার করে, সে ততো বেশি সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও সফলতার পেছনে নৈতিক দিকটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে, তবুও একজন সময়ানুবর্তিতা সম্পন্ন মানুষ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারে।

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্বমুহূর্ত এবং পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় পড়ালেখার মাধ্যমে সময়কে কাজে লাগাতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা জীবনের PSC, JSC, SSC এর তূলনায় HSC তে সিলেবাস অনেক বড় থাকে। তাই মাত্র ২ বছরের স্বল্প সময়ে সিলেবাস সম্পন্ন করার জন্য, প্রথম থেকেই পড়ালেখায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। শুধুমাত্র পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে পড়ে রেজাল্ট ভালো করা সম্ভব হয়না। তবে কৌশলে সময়ের সঠিক ব্যবহার করে করতে পারলে ভালো ফল পেতে পারেন।

(৯) লিখে লিখে পড়া/ লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা

কিছু শিক্ষার্থীর উপর পরিসংখ্যান করে জানা যায়, কোন বিষয়ে পড়ার চেয়ে লিখলে বেশি তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করা যায়। একটি বাক্য লিখতে আমাদের কয়েকবার সেটি মনে আনতে হয় বা ভাবতে হয়। তাছাড়া শরীরের অঙ্গ ব্যবহার করে লেখার ফলে মস্তিষ্কে সেই তথ্য রেকর্ড হয় সহজে।

তাই লিখে লিখে পড়লে এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হতে পারবেন। যাদের কোন পড়া মুখস্থ করতে দীর্ঘ সময় লাগে, তারা লিখে লিখে স্বল্প সময়ে মুখস্ত করতে পারবেন। তাছাড়া নিজেকে যাচাই করার জন্যও, আপনার পড়াটি পরিপূর্ণভাবে আয়তন হয়েছে কিনা সেটি জানতে লিখে যাচাই করুন।

অন্যদিকে, বেশি লিখলে লেখার গতি এবং সৌন্দর্য দুটিই বৃদ্ধি পাবে। যা আপনার পরীক্ষার হলে/ মূল যুদ্ধক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

(১০) রুটিন অনুসারে পড়ালেখা করা

পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হলে অবশ্যই একজন শিক্ষার্থীকে রুটিনমাফিক তার পড়তে হবে। নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করে পড়লে পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। আপনার মস্তিষ্ক বুঝতে পারে এই সময়টিতে আপনার কি করা উচিত। তখন খুব সহজেই একটি বিষয় আয়ত্ত করতে পারবেন। তাছাড়া নিয়ম মেনে সময়ানুবর্তিত অনুসরণ করে নিয়মিত পড়লে এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হতে পারবেন।

(১১) পরিমিত পরিমাণ পানি পান করা

পর্যাপ্ত পানি পান করলে আমাদের শরীর হাইড্রেটেট থাকে। যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়ক। প্রতিদিন পরিমাণ মতো পানি পান করলে পড়ালেখা মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।

(১২) মোবাইল আসক্তি দূর করা

বর্তমানে বহু শিক্ষার্থীর পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার অন্যতম বড় কারণ মোবাইল আসক্তি। ব্যক্তিগত স্মার্টফোন থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের HSC পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে সময় অপচয় করে। এতে তাদের মনোযোগ নষ্ট হয়, মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা কমে যায় এবং সার্বিকভাবে রেজাল্ট খারাপ হয়।

আরো পড়ুন: জিন্স নীল হওয়ার কারণ কি?

যদিও বহু শিক্ষার্থী তাদের লেখাপড়া গতিশীল এবং তথ্যবহুল করতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। তবে এর উপকারী দিক থেকে ক্ষতিকর দিকটাই বেশি। তাই এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার সীমিত/ বন্ধ করতে হবে।

(১৩) ধর্মীয় আদর্শ মেনে চলা

জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন বা আদর্শ মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। ধর্মীয়ভাবে আমাদের জ্ঞানার্জনের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে আমরা এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হতে পারবো।

অন্যদিকে, কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় নকল এবং প্রশ্ন ফাঁস সম্পর্কিত বিষয়ের সাথে জড়িত থাকে। এক্ষেত্রে ইসলামিক ভাবে আমাদের বলা হয়েছে, পরীক্ষা নকল করা বা ধোঁকাবাজি/ প্রতারণা করা তীব্রভাবে নিষিদ্ধ এবং নাজায়েজ।

শেষকথা

সর্বোপরি এইচএসসি পরীক্ষায় মনোযোগী হওয়ার জন্য কলেজ জীবনের শুরু থেকেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পরীক্ষার পূর্বে একদিনে সম্পূর্ণ বই আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। তাই উপরোক্ত উপায়গুলো ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগ করে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

Scroll to Top