প্রেমের বিয়েতে পরিবারের অসম্মতি এবার কি করবেন?

“প্রেমের বিয়ে”— এই কথাটা এই যুগে খুবই কমন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু একটা সময় এটা ছিল খুবই লজ্জার একটি বিষয়। পরিবারের নাক কাটা যেত এমনটা করলে। তবে এখন যে পরিবার এটা খুব সহজে মেনে নেয় এমনটা কিন্তু নয়। এখনো প্রায়শই পরিবার প্রেমের বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ধর্মীয়, সামাজিক বিভিন্ন কারণে এটা এখনো দৃষ্টিকটু। প্রেমের বিয়ে নিয়ে বলার আগে জানতে হবে প্রেম কী। এরপর প্রেমের বিয়ে কতটা সফল এবং এর ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

জগতে এমন কোনো মানুষ নেই, যিনি জীবনে কখনো প্রেমে পড়েনি। যতই সে অস্বীকার করুক না কেন, প্রেমে সে অবশ্যই পড়েছে বা পড়বে। আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলেও সূর্য ওঠে, না ঢাকা থাকলেও সূর্য ওঠে। সূর্যোদয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। ঠিক তেমনি প্রেম কারো বাধা মানে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, রূপ কিছুই মানে না। এটা যেন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মতো আবশ্যক একটা জিনিস মানুষের জীবনে। তাই প্রেমকে অস্বীকার করে যে, তারা মূলত নিজের কাছে নিজেকে লুকাচ্ছে।

প্রেম অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। একেক মানুষ একেক ধরনের প্রেমে লিপ্ত হয়। বয়স ভেদে প্রেমেরও ধরণ পাল্টায়। বয়ঃসন্ধির সময় ভালোলাগাকে অনেকে গভীর ভালোবাসা মনে করে ভুল করে। কাখনো প্রেমের রূপ ধরে কাম আসে। প্রেমকে ব্যাখ্যা করা খুবই জটিল। আবার প্রেম পড়া খুবই সহজ।

বয়স যখন বাড়তে থাকে, জগত সম্পর্কে জানতে থাকে মানুষ; তখন মানুষের রুচি বদলায়। সেই সাথে বদলায় আবেগের পরিমাপ।
বয়ঃসন্ধিকালে রূপ যতটা প্রাধান্য পায়, বয়স বাড়লে রূপের চাইতে ব্যক্তিত্বটা গুরুত্ব বেশি পায়। জীবন এমনই, এমনই জটিল, অনির্ভর, কাকতালীয় ঘটনা দিয়ে ভরা।

প্রেমের বিয়ে

প্রেমের বিয়ের সুবিধা ও অসুবিধা দুটো জিনিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই দুটোকে আলাদা করে লেখার সুযোগ নেই। আগে জানতে হবে কোন বয়সে প্রেম হয়েছে এবং বিয়ে হবে। সেই সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান খুবই গুরুত্ব বহন করে। প্রেমের বিয়েতে নারী এবং পুরুষের দুটো ভিন্ন অবস্থাও সৃষ্টি হয়।

সাধারণ পরিবারের একটি ছেলে চাইলেই ২০-২৪ বছরের মধ্যে বিয়ে করতে পারবে না। কেননা তাদের কাঁধে পুরো পরিবারের দায়িত্ব চেপে আছে। যতদিন না নিজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততদিন বিয়ে করাটা জন্য কঠিন। অপরদিকে একটি সাধারণ ঘরের মেয়ে ২০-২৪ বছর পর্যন্ত বিয়ের জন্য অপেক্ষা করবে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। এজন্য প্রেমের বিয়েতে মেয়ে এবং ছেলের দুটি ভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেখা যায় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার মানসিকতা কন্যা পিতার রয়েছে, কিন্তু ছেলের চাকরি নেই, অর্থনৈতিক অবস্থাও ততটা ভালো নয়, তাই এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কন্যা দান করতে চায় না এবং এটাই স্বাভাবিক। প্রতিটা কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা চায়, তার কন্যার যেন একটি সচ্ছল পরিবারে বিয়ে হয়।

অপরদিকে বয়স হওয়া সত্বেও বিয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ও সাহস না থাকায় ছেলেটি আস্তে করে পিছু হঠে যায়। পরিবারের অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও যখন ওরা পালিয়ে বিয়ে করে, তখন কিন্তু ওদের সংসার অতটা সুখকর হয় না। কথায় আছে, ‘অভাবে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালায়।’

আরও পড়ুন: স হ বাস বা যৌ ন সঙ্গম নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ‍SOHOBAS

এছাড়া সাধারণ পরিবারে প্রেমের বিয়ে মেনে না নেওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। সেটা হচ্ছে, সাধারণ পরিবারগুলো প্রায়শই ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা এবং যৌনাচার সমর্থন করে না। এটাকে এক প্রকার নির্লজ্জতা বলেই স্বীকার করে। এর ফলে দেখা যায়, প্রেম শব্দটি শুনলেই সাধারণ পরিবারের অভিভাবক শ্রেণী উত্তেজিত হয়ে পড়ে। আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগে।

এই তো গেল সাধারণ পরিবারের কথা। পয়সাওয়ালা পরিবারের মেয়ে এবং ছেলেদের সমস্যা একটু ভিন্ন। পয়সাওয়ালা পরিবারের মেয়েদের বয়স বেড়ে গেলেও ততটা চিন্তা হয় না পরিবারের। কেননা, পয়সার জোরে মেয়ের পড়ালেখা চলতে থাকে। ক্যারিয়ার গড়ার পথ হয় মসৃণ। পয়সাওয়ালা পরিবারে প্রেমের বিয়েতে তখনই সমস্যা সৃষ্টি হয়, যখন, মেয়ে ও ছেলের অর্থনৈতিক অবস্থার পার্থক্য হয়। অভিভাবক কখনোই অর্থহীন কারো সাথে সন্তানের বিয়ে দেবে না এটাই স্বাভাবিক।

আমাদের সমাজে বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে অর্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। এইজন্যই দেখা যায় কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা অনায়াসে তার কন্যাকে পুলিশ, রাজনীতিবিদ, সরকারি চাকরিজীবির হাতে তুলে দেয়। যদিও জানে, এ সকল পেশার মানুষদের বৈধ বেতন খুব বেশি নয়। শুধু এই আশাতে বিয়ে দেয়, কন্যা ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ মানুষের অবৈধ অর্থে সুখে থাকবে। নৈতিকতা বিবর্জিত সমাজে এর চাইতে ভালো কিছু আশা করা যায় না। যে সমাজে অর্থ মানুষের সম্মান ও পরিচয়ের মাপকাঠি, সেখানে সৎ মানুষের মর্যাদা কোথায়?

প্রেমের বিয়েতে নারী-পুরুষ উভয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ও অনির্ভরশীলতায় কাটে। কারণ, আজকাল অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। বিয়ের প্রলোভনে পুরুষেরা যেমন নারীর ক্ষতি করে। ঠিক তেমনি নারীরাও পুরুষের চরম ক্ষতি সাধন করে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েরা উচ্চ মোহরানায় বিয়ে করে; অতঃপর নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলার ভয় দেখিয়ে মোহরানার টাকা উসুল করে। এমন অহরহ ঘটনা ঘটছে দেশে।

জেনে নিন: নারীরা কোন রাশির পুরুষ পছন্দ করে জানেন কি?

ঠিক এমনিভাবে, পুরুষেরা প্রেমের ফাঁদে ফেলে নারীর মা-বাবার অবাধ্য হয়ে কন্যাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে। অতঃপর কয়েকদিন ভোগ করে ছেড়ে দেয় অথবা অন্য কোথাও বিক্রি করে দেয়। এ সকল ঘটনার নজির বাংলাদেশে অসংখ্য আছে।

সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে এবং এটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়— যখন মানুষ প্রেম করে তখন সে নিজেকে সবচাইতে উত্তম রূপে প্রদর্শন করে। নিজের ভালো গুণগুলো প্রকাশ করে। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে। কারণ তখন ভয় কাজ করে— ভালো আচরণ না করলে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে, বিচ্ছেদ ঘটে যাবে। অতঃপর বিয়ে হয়ে গেলে সেই ভয় অতটা কাজ করে না। সর্বদা ভালো আচরণ করারও প্রয়োজন পড়ে না। তখন নারী অথবা পুরুষ বিয়ের পূর্ববর্তী সময়ের সাথে বিয়ের পরবর্তী সময়ের তুলনা করে।

আরও পড়ুন : নিয়মিত মাসিক না হলে করনীয় কি

যতই তুলনা করে ততই হতাশায় ভুগতে হয়। ততই কষ্ট পেতে হয়। একটা সময় যা ঘৃণায় রূপ নেয়। বিচ্ছেদে পরিণত হয়। কখনো তো এটা এতটাই সহিংসতায় গিয়ে পৌঁছায় যে— ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়। প্রেমে ভর করে সবাই যে সবসময় সুখের গন্তব্যে পৌঁছাবে— এমনটা হয় না। হয়তো কেউ কেউ পৌঁছে, তবে সেটা সকলের জন্য আদর্শ নয়।

মা-বাবা এত কষ্ট করে, এত ত্যাগ স্বীকার করে সন্তান লালন পালন করে। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ায়‌। সন্তান লালন পালন করতে গিয়ে মা-বাবা নিজেদের ভালোবাসার জিনিসের বলিদান করে। নিজের জীবনটাকে সন্তানের জন্য উৎসর্গ করে। কিন্তু বড় হয়ে সন্তান যদি এরকমভাবে প্রেম করে নিজের জেদ বজায় রাখে, মা-বাবার উপর চাপ সৃষ্টি করে, তবে তা অকৃতজ্ঞা হবে। সেটা নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতার চরম পর্যায়ে যাবে। সন্তান যদি মা-বাবার জন্য এতটুকু ত্যাগ স্বীকার না করে তবে সন্তান কিসের।

সন্তান প্রেমের কথা উল্লেখ করলে যথা সম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাগারাগী করা যাবে না। ভালোভাবে শান্ত হয়ে সন্তানের কথা শুনতে হবে, বুঝতে হবে। প্রিয় মানুষটি সম্পর্কে ভালোভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। যদি দেখেন কোনো ঝামেলা আছে তবে তা সন্তানকে বুঝিয়ে বলবেন। এরপরও যদি না বোঝে তবে তো করার কিছু নেই। নিজের দুর্ভাগ্য ভেবে মেনে নিতে হবে। কেননা, আপনি যদি শাসন করেন তবে সে ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এই দেশে এমনও নজির আছে যে— মেয়ে তার পিতার নামে যৌন নির্যাতনের মামলা দায়ের করেছে। অতঃপর মামলা অনুসন্ধান করে দেখা যায়, প্রেমের বিয়েতে বাধা প্রদান করায় প্রেমিকের কুপরামর্শে এহেন নিকৃষ্ট কাজ করেছে।
অতএব সাবধান!

মা-বাবা কখনোই নিজ সন্তানের অমঙ্গল চায় না। তবে হয়তো কখনো মা-বাবার সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হতে পারে। এজন্য মা-বাবাকে আজীবন দোষারোপ করা উচিত না। সন্তানের কর্তব্য সদা মা-বাবার সন্তুষ্টি অর্জন করা। প্রেম সময়ের সাথে সাথে রূপ-রঙ বদলায়। কত চেনা মুখ নতুন করে চেনা হয়। চেহারা থেকে মুখোশ উন্মোচিত হয়। তাই পারস্পারিক সমঝোতায়, বিশ্বাসে সংসার-জীবন পরিচালনা করলে জীবন সুখের হবে। নচেৎ এই প্রেম দিয়ে সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয় না, ফাটল দেখা দেয় খুব দ্রুত। জানা গেল- প্রেমের বিয়েতে পরিবারের অসম্মতি এবার কি করবেন?

Share This Post
Scroll to Top